ভারতের নিষেধাজ্ঞা: বিশ্ববাজারে বাড়লো গমের দাম

আন্তর্জাতিক স্লাইড

মে ১৭, ২০২২ ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ

গম রফতানির ওপর ভারত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বিশ্ববাজারে বেড়ে গেছে খাদ্যশস্যটির দাম। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় বেঞ্চমার্ক ইনডেক্সে বিশ্বে গমের মূল্যসূচক বেড়ে গেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরের মাস মার্চে প্রচণ্ড গরম আর তাপদাহে ভারতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গমের ফলন। এতে দেশটির অভ্যন্তরে প্রধান খাদ্যশস্যটির দাম বেড়ে যায় রেকর্ড পরিমাণ। এমন বাস্তবতায় গম রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি।

গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিশ্ববাজারে গমের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এতে গম থেকে উৎপাদিত রুটি, নুডুলসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। গত শুক্রবার অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গম রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।

দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত সংস্থা (ডিজিএফটি) স্থানীয় সময় শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়।

শুক্রবারের ঘোষণার আগে লেটার অফ ক্রেডিট (এলওসি) ইস্যু হয়েছে এমন সব রপ্তানির চালান সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো হবে। এর বাইরেও কোনো দেশের অনুরোধে গম রফতানি করা যাবে।

ডিজিএফটির ঘোষণায় আরও বলা হয়, দেশের সার্বিক খাদ্যসংকট নিয়ন্ত্রণে নয়াদিল্লি গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবেশী ও অন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে প্রয়োজনে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে ভারত।

চীনের পর গমের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ ভারত। তবে উৎপাদিত গমের অধিকাংশই ভারতকে ব্যবহার করতে হয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে গমের অন্যতম রফতানিকারক দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ভারতের দ্বারস্থ হন ক্রেতারা।

ভারত সরকার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আগে ইস্যু করা রপ্তানির আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন দেশকে গম পাঠানো অব্যাহত রাখবে নয়াদিল্লি। আর যে সব দেশ তাদের খাদ্যনিরাপত্তার চাহিদা মেটাতে ভয়াবহ সংকটের মুখে রয়েছে, তারাও ভারতের গম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।

ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারাও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী নয় এবং এটি সংশোধন করা যেতে পারে। তবে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত গ্রুপ অফ সেভেন-জি৭ভুক্ত দেশগুলোর বৈঠকে কৃষিমন্ত্রীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

জার্মান খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী সেম ওজদেমির বলেন, ভারতের মতো অন্য দেশগুলো যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা বাজার বন্ধ করতে শুরু করে, তবে এই সংকট আরো তীব্রতর হয়ে দেখা দেবে।

জি৭ হলো বিশ্বের সাতটি বৃহত্তম ও উন্নত অর্থনীতির একটি সংগঠন, যার আধিপত্য রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায়। জি৭ভুক্ত দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

যদিও ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ, তবে এটি প্রধান রফতানিকারক দেশ নয়। কারণ এর বেশির ভাগ উৎপাদিত শস্য অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়।

এদিকে রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের গম রফতানিতে ধস নামে। খরা ও বন্যার হুমকিতে থাকা দেশগুলো নিজেদের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে।

নিষেধাজ্ঞা দেয়ার এক সপ্তাহ আগে, ভারত চলতি বছর রেকর্ড ১০ মিলিয়ন টন গম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।

দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে গমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত একাই তা মেটাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের সঙ্গে মিল রেখে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোটা বিশ্ববাসীকে খাবার সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভারত। তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে নিজের অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে যায় নয়াদিল্লি, এমন মন্তব্য করেছেন সংবাদমাধ্যম বিবিসির ভারতবিষয়ক সম্পাদক ভিকাস পান্ডে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *