ফ্রান্সে নির্বাচন: প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে যারা

আন্তর্জাতিক স্লাইড

এপ্রিল ৮, ২০২২ ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ

আগামী পাঁচ বছরের জন্য নিজেদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে এপ্রিল মাসে ভোট প্রদান করবে ফ্রান্সে ভোটাররা। এ নির্বাচন দুটো ধাপে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়াই করছেন।

প্রার্থীদের পরিচয়

নির্বাচনে মোট প্রার্থী ১২ জন। তাদের মধ্যে আটজন পুরুষ এবং চারজন নারী। প্রধান ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে তিনজন দক্ষিণপন্থী এবং দু’জন বামপন্থী ফরাসি রাজনীতিক।

এমানুয়েল ম্যাক্রঁকে দেখা হয় একজন মধ্যপন্থী রাজনীতিক হিসেবে। তিনি রিপাবলিক অন দ্য মুভ পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার প্রতি দক্ষিণ ও বাম উভয় শিবিরের ভোটারদের সমর্থন রয়েছে।

মারিন লা পেন এবং এরিক জিম্যো তারা দু’জনেই অতি-দক্ষিণপন্থী। তাদের মধ্যে মি. জিম্যোকে দেখা হয় সবচেয়ে বেশি কট্টরপন্থী হিসেবে।

ভ্যালেরি পেক্রেস দক্ষিণপন্থী রিপাবলিকানদের প্রার্থী হয়েছেন।

জ্যঁ-লুক মেলেশঁ নির্বাচন করছেন অতি-বামপন্থী রাজনৈতিক দল ফ্রান্স আনবাউড থেকে এবং ইয়ানিক জাদো গ্রিন পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন।

পর্যায়ক্রমে বেশ কিছু বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার পর ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী বাম রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর আলোচনায় নেই।

সোশালিস্ট পার্টির ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তার পর থেকে দলটির প্রতি সমর্থন কমে গেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাম শিবিরের এ বিভাজনের কারণে এমানুয়েল ম্যাক্রঁ লাভবান হতে পারেন, যদিও ডানপন্থীরা অভিযোগ করছেন যে মি. ম্যাক্রঁ তাদের নীতি অনুসরণ করছেন।

ইউক্রেনের যুদ্ধ নির্বাচনী প্রচারণায় বড় ধরনের জায়গা দখল করে নিয়েছে। তবে ভোটারদের কাছে প্রধান ইস্যু জীবন নির্বাহের খরচ বেড়ে যাওয়া।

ফরাসি নির্বাচনী ব্যবস্থা কিভাবে কাজ করে?

ধারণা করা হচ্ছে, দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৪ দিনের ব্যবধানে। যদি কোন একজন প্রার্থী প্রথম দফার নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান, তাহলে যে দু’জন প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন তারা পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে অংশ নেবেন।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া

প্রথম দফার নির্বাচনে কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রথম রাউন্ডের এ ভোট হবে ১০ই এপ্রিল। আর দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট ২৪শে এপ্রিল।

দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে যিনি বিজয়ী হবেন তিনিই ১৩ই মে ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

জনমত জরিপ কী বলছে

গত ছ’মাস ধরে যেসব সমীক্ষা চালানো হচ্ছে তাতে এগিয়ে আছেন এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর তিনি আরো এগিয়ে যান কিন্তু পরে অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে তার ব্যবধান কমতে থাকে।

বাকি প্রার্থীদের তুলনায় বেশ ভালভাবেই এগিয়ে আছেন মারিন লা পেন। অন্যদিকে অতি-দক্ষিণপন্থী এরিক জিম্যোর প্রতি সমর্থন কমে যেতে থাকে। মি. জিম্যো একবার বলেছিলেন যে, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শ্রদ্ধা করেন।

প্রধান প্রধান নির্বাচনী ইস্যু

নির্বাচনী প্রচারণার আগের দিকে ইউক্রেনের যুদ্ধই প্রাধান্য বিস্তার করেছে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পায়। তবে সম্প্রতি যেসব জনমত সমীক্ষা চালানো হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে মানুষের জীবন নির্বাহের খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি একমাত্র প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরেই রয়েছে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, অবসর ভাতা, পরিবেশ এবং অভিবাসন।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে ফ্রান্সের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায় যা দেশটির গত অর্ধ-শতাব্দীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারি থেকে তাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

ফ্রান্সের অর্থনীতি বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের ওপরেই এর প্রভাব পড়েছে। ফ্রান্সে বেকারত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৪%। ইউরোজোনের দেশগুলোর গড় হারের তুলনায় এ হার সামান্য উপরে।

তবে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ ক্ষমতা গ্রহণের সময় যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন বর্তমান হার তার খুব কাছাকাছি। অভিবাসনের বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে ফ্রান্সে বসবাসরত অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬৮ লাখ। তাদের এক তৃতীয়াংশ ইউরোপীয় যারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য এবং সদস্য নয় এমন দেশগুলো থেকে ফ্রান্সে গেছেন। মোটের ওপর সবচেয়ে বেশি অভিবাসী গেছেন আলজেরিয়া থেকে। তারপরেই রয়েছে মরক্কো এবং পর্তুগাল। দক্ষিণপন্থী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে।

ফ্রান্সে অভিবাসন

মি. জিম্যো নির্বাচিত হলে ‘জিরো ইমিগ্রেশন’ নীতি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি একজন অভিবাসীকেও ফ্রান্সে আশ্রয় দেবেন না।

তিনি এও বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট হলে প্রতি বছর এক লাখ করে অভিবাসীকে আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া এবং মরক্কোতে ফেরত পাঠানো হবে।

মারিন লা পেন মি. জিম্যোর এ দৃষ্টিভঙ্গির নিন্দা করেছেন। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর ব্যাপারে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

নিরাপত্তার ইস্যুতে ভ্যালেরি পেক্রেস, এরিক জিম্যো এবং মারিন লা পেনের তীব্র সমালোচনার পর এমানুয়েল ম্যাক্রঁ আরো কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

মি. ম্যাক্রঁ বলেছেন তার আমলে অপরাধ কমেছে।

ফ্রান্সে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে যে কারণে অনেক ফরাসি ভোটারের কাছে নিরাপত্তার গুরুত্ব আরো বেশি জোরালো হয়ে উঠেছে।

-বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *