ফুলের শহিদ মিনার গিনেস বুকে রেকর্ডের হাতছানি

ফুলের শহিদ মিনার গিনেস বুকে রেকর্ডের হাতছানি

জাতীয় স্লাইড

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩ ১২:০৪ অপরাহ্ণ

চোখ জুড়ানো সবুজ প্রান্তর। যতদূর দৃষ্টি যায়, সবুজ চারাগাছে বাতাসে দোল খাচ্ছে বাহারি রঙের ফুল। খোলা আকাশে ২২০ ফুট আয়তনজুড়ে করা হয়েছে ফুলের বিশাল ক্যানভাস। একটু খেয়াল করে দেখলেই দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে শহিদ মিনারের প্রতিকৃতি। কোনো রঙের ছোঁয়ায় নয়। শিল্পীর তুলিতেও আঁকা হয়নি। ১৩ হাজার টবে লাগানো গাছে-লাল, নীল, সবুজ, সাদাসহ ছয় রঙের জাপানি পিটুনিয়া ফুল দিয়ে করা হয়েছে এক অনন্য সৃষ্টি; যা দেখতে ভিড় করছে হাজারো মানুষ। সোমবার রাজধানীর বেরাইদে ঠিকানা রিসোর্টে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে ভাষাশহিদদের স্মরণে ও শ্রদ্ধা জানাতে গত বছরও একইভাবে শহিদ মিনারের এই বিসাল ক্যানভাস করা হয়েছিল। তখন গিনেস বুকের স্বীকৃতি পেতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়। এরই মধ্যে ইতিবাচক সারা মিলেছে। শিগগিরই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড প্রতিনিধিরা ফুল দিয়ে তৈরি শাহিদ মিনার পরিদর্শন করবেন। সরেজমিন চিত্র ঠিক থাকলেই মিলবে বিশ্ব রেকর্ডের সনদ। জানতে চাইলে এই অনন্য স্থাপনার মূল পরিকল্পনাকারী উদ্যোক্তা আফরিন তাইয়্যেবা আলিফ বলেন, আমি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি একজন তরুণ উদ্যোক্তা। প্রকৃতি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। ভাষাশহিদদের স্মরণে এবং তাদের শ্রদ্ধা জানাতে এই শহিদ মিনার তৈরি করা। তাই ২২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৫ ফুট উচ্চতার এই ক্যানভাসটি প্রথমে বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছি। পরে ১৩ হাজার টবে লাল, নীল, সবুজ, সাদাসহ ছয় রঙের জাপানি পিটুনিয়া ফুলসহ গাছ দিয়ে একের পর এক সাজিয়ে শহিদ মিনারের এ প্রতিকৃতি বানানো হয়। বীজ বপন, গাছ গজানো, ফুল ফোটা থেকে শুরু করে টব সাজিয়ে শহিদ মিনার বানাতে এক মাস সময় লেগেছে।

তিনি জানান, এ উদ্যোগে এখন বিশ্ব রেকর্ডের আশা করছি। গত বছর গিনেস বুকের স্বীকৃতি পেতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সারা পেয়েছি। তারা শিগগিরই সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সব ঠিক থাকলে খুব তাড়াতাড়ি বিশ্ব রেকর্ডের সনদ মিলবে বলে আমি আশা করছি। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখেছি ফুল দিয়ে এমন শহিদ মিনারের প্রতিকৃতি এর আগে কোথাও বানানো হয়নি। তখনই বিশ্ব রেকর্ড গড়ার চিন্তা মাথায় আসে। সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে ছুটে আসছেন নানান বয়সি মানুষ। ঠিকানা রিসোর্টে বেড়ানোর ফাঁকে ফুল দিয়ে তৈরি শহিদ মিনার দেখতে ভিড় করছেন। লাইন ধরে তুলছেন ছবি। কথা হয় গাজীপুর থেকে আসা হেলেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে ফুল দিয়ে তৈরি শহিদ মিনার দেখতে এসেছি। ছেলেমেয়েরা দেখে অনেক আনন্দ পেয়েছে। সবাই মিলে এই রিসোর্টে খাওয়াদাওয়া শেষে ছবি তুলছি। এমন একটি ক্যানভাস দেখে সত্যি খুব ভালো লেগেছে। সবার এখানে আসা উচিত বলে আমি মনে করছি।

ঠিকানায় দুপুরের দিকে এসেছে হাসিনা ও জাহিদ দম্পতি। তারা বলেন, আমরা দুজনই চাকরি করি। গুলশান থেকে এখানে ছোট শিশুটিকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ফুলের শহিদ মিনারটি পেছনে রেখে সেলফি তুলছি। সঙ্গে পরিবারের ছোট সদস্যকে শহিদ মিনার দেখাচ্ছি। সময় খুব ভালো কাটছে। তারা জানান, তরুণ প্রজন্মের এই নারী উদ্যোক্তার ভাবনা আমাদের নতুন কিছু শিখিয়েছে।

আফরিন তাইয়্যেবা আলিফ বলেন, প্রথমে টিন ও কাঠ দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে অবসর সময় কাটানোর ভাবনা থেকেই গড়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরি বাড়ি ‘ঠিকানা’। বাড়িটি ঘিরে লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ। রাজধানীর মধ্যে এমন গ্রাম্য পরিবেশ দেখতে ছুটে আসছেন অনেক মানুষ। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িটির পরিধি বাড়ানো হয়েছে। বাড়িটির পাশে কাঠের পাটাতনের বিশাল জায়গা ফুল দিয়ে সাজানো হয়ছে। এ অংশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘খোলা আকাশ’। এই খোলা আকাশের একটি অংশেই ফুলের শহিদ মিনারের প্রতিকৃতি বানানো হয়েছে। পাশাপাশি গ্রাম্য পরিবেশে খাওয়া এবং সময় কাটাতে আরও একটি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নানা ধরনের ভর্তা দিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়। আছে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঝড় তোলার মতো আড্ডার জায়গা। পাশাপাশি সুবিশাল খোলা জায়গা রাখা আছে, যেখানে মানুষ মন খুলে চলাফেরা করতে পারবে। আর পুরো ঠিকানা ও খোলা আকাশ জায়গাটিকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *