পুতিনকে কি আদৌ গ্রেফতার করা সম্ভব

পুতিনকে কি আদৌ গ্রেফতার করা সম্ভব

আন্তর্জাতিক স্লাইড

মার্চ ১৯, ২০২৩ ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

গোটা বিশ্বেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর। এই আদেশে ক্রেমলিন পাত্তা না দিলেও স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইউক্রেন যুদ্ধে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন পুতিন। এমন সিদ্ধান্তে নিয়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছে আইসিসি। কিন্তু আসলেই কি পুতিনকে গ্রেফতার করা সম্ভব, এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। আপাতত এই আলোচনায় সরগরম গোটা দুনিয়া।

পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসি’র গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ ছাড়া আর কিছু নয়।

জাতিসংঘের দৃঢ় বিশ্বাস, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের জন্য রুশ নেতাকে অভিযুক্ত করার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তবে এ ধরনের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাস্তব ও যৌক্তিক জটিলতার শেষ নেই।

ফলে পুতিনকে আসলেই বিচারের মুখোমুখি করা যাবে কি না, কী কী সংকট রয়েছে, সেইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে জারি করা আইসিসির পরোয়ানা ইউক্রেন যুদ্ধেই বা কতটুকু প্রভাব ফেলবে, তা খতিয়ে দেখেছে বিবিসি।

পুতিনকে গ্রেফতার করা যাবে?

পুতিন এখন নিজ দেশে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী, ফলে তাকে আইসিসির কাছে ক্রেমলিনের হস্তান্তরের কোনো সম্ভাবনা নেই। যতদিন তিনি রাশিয়ায় থাকবেন, ততদিন গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি নেই।

রাশিয়ার বাইরে গেলে পুতিন আটক হতে পারেন। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় তার চলাফেরা ইতোমধ্যে সীমিত হয়ে গেছে। তাই যে দেশ তাকে বিচারের আওতায় আনতে চায়, সেখানে পুতিনকে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার শুরুর পর প্রেসিডেন্ট পুতিন মাত্র আটটি দেশে সফর করেছেন। এর মধ্যে সাতটি দেশ রাশিয়ার পার্শ্ববর্তী, অর্থাৎ ১৯৯১ সালের শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার আগে তারা রাশিয়ার সঙ্গেই ছিল।

এই দেশগুলোর বাইরে আরেকটি দেশে তিনি সফর করেছেন, সেটি হল ইরান। গত বছরের জুলাইয়ে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনির সঙ্গে দেখা করেন পুতিন। যেহেতু ইউক্রেন যুদ্ধে ইরান ড্রোন ও অন্যান্য সামরিক রসদ দিয়ে রাশিয়াকে সাহায্য করছে, তাই পুতিন ইরানে আবার গেলেও তার বিপদে পড়ার সম্ভাবনা নেই।

আসলেই বিচারের মুখোমুখি হবেন?

এই ক্ষেত্রে অন্তত দুটি বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রথমত, রাশিয়া আইসিসির এখতিয়ার বা কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। ২০০২ সালে ‘রোম সংবিধি’ অনুযায়ী আইসিসি গঠিত হয়েছিল। ফলে এর আদেশ কেবল সেসব দেশের জন্যই খাটে, যারা ওই চুক্তিতে সই করেছিল।

আইসিসির আইন অনুযায়ী, চুক্তিতে সই করা দেশগুলোর কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগ উঠলে সেই দেশ নিজস্ব ফৌজদারি কর্তৃত্ব প্রয়োগ করবে। আর সেই দেশগুলো যদি তদন্ত ও বিচার করতে না পারে, তখনই কেবল আইসিসি সেখানে হস্তক্ষেপ করবে।

সব মিলিয়ে ১২৩টি দেশ আইসিসির চুক্তিতে সই করেছে, রাশিয়াসহ কিছু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশ এতে এখনও সই করেনি।

আইসিসি গঠনের চুক্তিতে রাশিয়া সই না করায় সংস্থাটির পরোয়ানায় রাশিয়া থেকে কাউকে প্রত্যর্পণের বাধ্যবাধকতাও দেশটির নেই।

সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, “আমাদের দেশের জন্য আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের ওই আদেশে অর্থহীন, এমনকি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকেও ওই আদেশ কোনো অর্থ বহন করে না।

“রাশিয়া রোম সংবিধিতে সই করা দেশ নয়, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতেরও অংশীদার নয়। ফলে ওই আদালতের আদেশ মানার কোনো দায়ও আমাদের নেই।”

আবার এই পরোয়ানাকে স্বাগত জানানো ইউক্রেনসহ কয়েকটি দেশ চুক্তিতে সই করেছে, তবে অনুসমর্থন দেয়নি এখনও। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, পুতিনের বিপক্ষে আইনি অবস্থান নড়বড়ে।

দ্বিতীয়ত, বিবাদী ছাড়া কাঠগড়ায় বিচার পরিচালনার বিষয়টি সবার অজানা না হলেও, এটি এখানে খাটছে না। আইসিসি কারও অনুপস্থিতে বিচার করে না, তাই সেই পথটিও বন্ধ।

আর কারা আওতায় এসেছেন?

মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের ধারাটি রয়েছে আইসিসি প্রতিষ্ঠার আগে থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে নুরেমবার্গ ট্রায়াল দিয়ে এর শুরু হয়। যুদ্ধের সময় গণহত্যা ও অন্যান্য নৃশংস কর্মকাণ্ডের ঘটনায় নাৎসি জার্মানির সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে এটি গঠন করা হয়েছিল।

এই ট্রায়ালের আওতায় এসেছিলেন নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের ডেপুটি রুডলফ হেস। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং ১৯৮৭ সালে আত্মঘাতী হয়ে মারা যান তিনি।

অবশ্য পুতিনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি; যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস যুক্তি দিয়েছেন, এই অভিযোগও আনা উচিৎ।

সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *