নাসিরনগরে আদম ব্যবসায়ী কনুর খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

নাসিরনগরে আদম ব্যবসায়ী কনুর খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

দেশজুড়ে

অক্টোবর ২০, ২০২২ ৪:৫১ অপরাহ্ণ

মোঃ আব্দুল হান্নান, নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার উড়িয়াইন গ্রামের আদম ব্যবসায়ী কনু মিয়ার খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব প্রায় শতাধিক পরিবার। কথিত আছে সারা বাংলাদেশ থেকে প্রায় হাজারের অধিক লোক ইতালি নেওয়ার নাম করে হাতিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তাছাড়া বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে প্রায় ৩ হাজার পাসপোর্ট জমা নিয়েছে কনু।

লিবিয়া নেওয়ার নাম করে প্রথমে ৪ লাখ টাকায় নেয় কনু। পরে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার নাম করে তুলে দেয় মাফিয়া গ্রুপের হাতে।সেখানে নেয়ার পর তারা চালায় অত্যাচারের স্টীম রুলার, শারীরিক আর মানষিক নির্যাতন। চাওয়া হয় আরো ৫/১০ লাখ টাকা।টাকা না দিতে না পারলেই আবার অত্যাচার। নিরুপায় হয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে কাংখিত টাকা তাদের হাতে তুলে দিলেও স্বপ্নের সোনার হরিন নামক ইতালিতে পৌঁছাতে পারেনি অসহায় বিদেশ যাত্রী।

জানা যায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন ইউপি’র প্রায় ২০/২৫ জন থেকে ইতালি নেওয়ার নাম করে টাকা নেয় কনু মিয়া। কিন্তু তাদের কেউই আজ পর্যন্ত ইতালির মুখ দেখেনি। তবে প্রতিনিয়ত ইতালি পাঠানোর নামে জমা নিচ্ছে পাসপোর্ট। পাসপোর্ট প্রতি নেয়া হয় ৪/৫ লক্ষ টাকা। কিনছে এলাকার সব দামী দামী জমি। অভিভাবকদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়,স্হানীয় সাবরেজিস্টার অফিসে প্রায় প্রতিদিনই আদম ব্যাপারি কনু মিয়ার জমি রেজিষ্টে্রশন এর কাজ হয়। তার টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল।

কে এই কনু মিয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার উড়িয়াইন গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল এর ছেলে কনু মিয়া। ৫ ভাই বোনের মধ্যে বড় কনু মিয়া। এক সময় দিনমজুরি করে দিনাতিপাত করত কনু। মুলত কনু মিয়ার ২ সংসার থাকলেও তিনি ১জনের দেখভাল করে বলেই এলাকাবাসী জানায়। জানা যায় ১ম স্ত্রীর সংসারে ৮ জন ও ২য় স্ত্রীর সংসারে ১ সন্তান রয়েছে। কনু মিয়া দিনমজুরি করলেও তার প্রথম স্ত্রীর গর্ভের বড় ছেলে জাহাঙ্গীর স্হানীয় ছাতিয়াইন বাজারে ঝালমুড়ির ব্যবসা করত। বেশ কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরকে এক পরিচিতের মাধ্যমে ইতালি পাঠায়। আর জাহাঙ্গীরের ইতালি গমনে যেন কনুর হাতে ধরা দেয় আলাউদ্দিনের আশ্চর্য চেরাগ।

যে ভাবে ঝালমুড়ি বিক্রেতা থেকে কোটিপতি : ইতালি যাওয়ার পর জাহাঙ্গীরের সাথে পরিচয় হয় এক দালাল চক্রের। তাদের কথা মত জাহাঙ্গীর এলাকার মানুষের কাছে ইতালি জনবল নেওয়ার কথা তার বাবা কনু মিয়ার মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে। সরল বিশ্বাসে আশেপাশের এলাকার মানুষ কনু মিয়ার কাছে পাসপোর্টসহ টাকা জমা দেয়। আর এই টাকা দিয়ে কনু মিয়া জমি কিনা শুরু করে। জানা যায় কনু মিয়া শতাধিক কানি জমির মালিক।

ছাতিয়াইন গ্রামের ভুক্তভোগী তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার ছেলে মোঃ সেলিম (২৮) কে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইতালি নেওয়ার চুক্তি করে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার পর আরো ১ লাখ টাকা দাবি করে। দাবিকৃত ১ লক্ষ টাকা পরিশোধ করার পর আজ প্রায় ৫ মাস তাকে লিবিয়ার এক জঙ্গলে মাফিয়া চক্রের কাছে জিম্মি রাখে এবং আরো ৩ লক্ষ টাকা দাবি করে। ছেলেকে বাচাতে তোফাজ্জল দাবিকৃত আরো ৩ লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট ৯ লক্ষ টাকা কনু মিয়াকে পরিশোধ করলেও আজ পর্যন্ত তাকে ইতালি নেওয়ার ব্যবস্থা করেনি।

ছাতিয়াইন বাজারের লন্ডি্র দোকানের শ্যামার ছেলেকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে প্রথমে ৪ লাখ টাকা নিলেও লিবিয়া নিয়ে মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেয়। জানা যায়, মাফিয়া চক্রের অত্যাচার ও মারপিট সহ্য করতে না পেরে শ্যামার ছেলে শ্যামাকে ফোন করে আরো টাকা দিতে বললে ছেলে কে বাঁচাতে শ্যামা আজ পর্যন্ত প্রায় ২০ লক্ষ টাকা কনুর হাতে তুলে দেয়। কিন্তু তাকেও ইতালি পৌঁছে দেওয়া হয়নি।

লিবিয়ার জঙ্গল থেকে সন্তানের আহাজারি শুনে পাগল প্রায় শতাধিক পিতামাতা। নিঃস্ব হয়ে মুখ খুলতে ভয় পায় তারা। অভিযোগ কারীদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, যদি তাদের নাম প্রকাশ হয় তাহলে তাদের সন্তান দের লাশ ও পাওয়া যাবেনা। কনু মিয়া ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর অসহায় পরিবার গুলোকে হুমকি দিয়েছে যদি সাংবাদিক অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায় তবে তাদের ছেলের আশা ছেড়ে দিতে। তাই সন্তানের মুখ দেখার আশায় অসহায় পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কনু মিয়ার মোবাইল নাম্বারে একাদিক বার যোগাযোগ করলেও তার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *