নায়িকাদের শাড়ি পরিয়েই লাখ লাখ টাকা আয় করেন তিনি

নায়িকাদের শাড়ি পরিয়েই লাখ লাখ টাকা আয় করেন তিনি

বিনোদন

মে ২৯, ২০২৩ ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

ডলি জৈন। যিনি শুধু শাড়ি পরিয়েই মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন।  তিনি কলকাতার এক গৃহবধূ। শাড়ির স্টাইল অনুসারে ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন তিনি।

ডলির আঙুলের ছোঁয়ায় নাকি সাধারণ শাড়িও ভোল পাল্টে ফেলে! এমনই বিশ্বাস ফ্যাশন দুনিয়ায়। যার কারণে বলিউড তারকারা ইদানিং নামী ব্র্যান্ডের গাউন ছেড়ে শাড়ি হাতে শরণাপন্ন হন ডলির কাছে।

সম্প্রতি প্যারিসের কান চলচ্চিত্রোৎসবে শাড়ি পরে হাজির হয়েছিলেন বলিউডের বর্তমান সময়ের অভিনেত্রী সারা আলি খান। ভারতীয় ডিজাইনার আবু জানি এবং সন্দীপ খোসলার হাতে তৈরি সরু পাড় সাদা শাড়িটি তাকে কানের রেড কার্পেটের জন্য পরিয়ে দিয়েছিলেন ডলি। এর আগেও কানে দীপিকা পাড়ুকোনকে রেড কার্পেটের জন্য শাড়ি পরিয়েছিলেন তিনি।

গত কয়েক বছর ধরে তারকারা তাদের বিয়ে বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্যও ডেকেছেন ডলিকে। কিছুদিন আগেই বলিউড অভিনেত্রী কিয়ারা এবং নায়ক সিদ্ধার্থের বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন ডলি। নায়িকাকে শাড়ি এবং লেহঙ্গায় পরানোর দায়িত্ব ছিল তার উপরেই। এমনকি, সিদ্ধার্থকে উড়নিও পরিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই।

বিয়ের শাড়ি বা লেহেঙ্গা যে পোশাকশিল্পীই বানিয়ে থাকুক, সেটি সুন্দর করে পরিয়ে দেওয়ার জন্য ডলির উপরেই ভরসা করেন বলিউডের নায়িকারা। প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে বিয়ের সাজে সাজিয়েছিলেন ডলি। দীপিকা পাড়ুকোনের বিয়ের শাড়িও ডলির পরানো। এমনকি, আলিয়া ভাট, ক্যাটরিনা কাইফ, নয়নতারাকেও তাদের বিয়ের দিনে শাড়ি পরিয়েছিলেন কলকাতার এই গৃহবধূই।

তবে ডলির জনপ্রিয়তা শুধু বলিউডের গণ্ডিতে আটকে নেই। ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানীর কন্যা ইশা আম্বানীকে বিয়ের শাড়ি পরিয়েছেন ডলি। শাড়ি পরিয়েছিলেন মুকেশের পুত্রবধূ শ্লোক মেহতা এবং হবু পুত্রবধূ রাধিকা মার্চেন্টের বাগদানের অনুষ্ঠানেও। আবার ভারতীয় ক্রিকেটার হার্দিক পান্ডিয়ার বিয়েতে তার স্ত্রী নাতাশাকেও শাড়ি পরানোর জন্য ডাক পড়েছিল তার।

ফ্যাশন দুনিয়ায় মেট গালার বেশ নামডাক রয়েছে। গত বছর সেই মেট গালায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সেরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার ভারতীয় শিল্পপতি আদর পুণাওয়ালার স্ত্রী নাতাশা পুণাওয়ালাকে। নাতাশা বরাবরই ফ্যাশন সচেতন। মেট গালার জন্য বেছে নিয়েছিলেন বাঙালি পোশাকশিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের শাড়ি। আর সেই শাড়ি নাতাশাকে পরিয়েছিলেন ডলি।

ডলির অনুরাগীদের দাবি, শাড়ি পরানোর জন্য হয়তো একটু বেশিই দাম নেন ডলি। কিন্তু তাঁর আঙুল, কয়েকটি সেফটিপিন, আর সুচসুতোর কেরামতি ম্যাজিক দেখাতে পারে। বলিউড অভিনেত্রী রাভিনা ট্যন্ডন নাকি একবার ডলিকে বলেছিলেন, ‘তোমার হাতে সেফটিপিনের যাত্রা নিয়ে একটা বই লিখে ফেলো।’ ডলির শাড়ি পরানোর প্রশংসা করে দীপিকা বলেছিলেন, ‘তোমার হাতে পড়লে অবাধ্য শাড়িও বাধ্য হয়।’

কলকাতার গৃহবধূ ডলি অবশ্য নিজের পরিচয় দেন ‘ড্রেপিং আর্টিস্ট’ হিসেবে। ডলির দাবি, তিনি ১২ হাতের একটি কাপড়কে ৩৬০ রকম স্টাইলে পরাতে পারেন। তবে তাঁর এই দক্ষতার কৃতিত্ব যত না তাঁর নিজের, তার চেয়ে অনেক বেশি তার শ্বশুরবাড়ির।

ডলির জন্ম রাঁচীতে। বেড়ে ওঠা বেঙ্গালুরুতে। যদিও তার পরিবার রাজস্থানের বাসিন্দা। ডলি একজন সাধারণ গৃহবধূ হয়েই থেকে যেতে পারতেন। কিন্তু ২০০৬ সালে কলকাতার এমন একটি পরিবারে বিয়ে হল ডলির, যেখানে শাড়ি ছাড়া অন্য কিছুই পরার অনুমতি নেই।

ডলি জানিয়েছেন, কলকাতায় এসে শাড়ি ছাড়া অন্য কিছুই পরতে পারতেন না তিনি। সেই শাড়িও পরতে রোজ ৪৫ মিনিট সময় লাগত তার। কিছুটা নিজের প্রয়োজনেই ডলির শাড়ি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু। সময় বাঁচাতে নানা রকম ভাবে শাড়ি পরতেন তিনি। তার সেই শাড়ি পরার স্টাইলের প্রশংসাও হতে শুরু করে। ডলি জানিয়েছেন, শাড়ি নিয়ে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্রমেই ভাল লাগার জায়গায় পৌছায় তার।

একটি সাক্ষাৎকারে ডলি বলেছেন, ছোট থেকেই পুতুলকে নানা রকম ভাবে শাড়ি পরাতেন তিনি। সেই পুরোনো নেশা হঠাৎ পেয়ে বসে তাকে। একটি ম্যানিকুইন কিনে তাকে নানা ভাবে শাড়ি পরানো অভ্যাস করতেন ডলি। এমনও হয়েছে, মাঝরাতে নতুন কোনো শাড়ির স্টাইলের কথা মনে পড়েছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা পরীক্ষা করেছেন তার ম্যানিকুইনের উপর।

নতুন ধরনের কোনও কায়দায় শাড়ি পরিয়ে তা পছন্দ হলে তার ছবি তুলে রাখতেন ডলি। নিজেও পরে দেখতেন। এভাবে সাড়ে তিনশোরও বেশি কায়দায় শাড়ি পরানোর কৌশল রপ্ত করেছেন তিনি।

এখন মণীশ মালহোত্রা, আবু জানি-সন্দীপ খোসলা, সব্যসাচীর মতো পোশাকশিল্পীদের শাড়ি পরাতে বিভিন্ন ফোটোশুটে ডাক পড়ে তার। সম্প্রতিই মুকেশ-নীতা আম্বানীর কালচারালের সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হলিউড তারকা গিগি হাদিদকেও শা়ড়ি পরাতে ডাকা হয়েছিল তাকে।

প্রায় এক দশক ধরে এই কাজই করে আসছেন ডলি। সবচেয়ে দ্রুত শাড়ি পরার রেকর্ড রয়েছে তায়। সবচেয়ে দ্রুত ১২৫ রকমের কায়দায় শাড়ি পরানোর জন্য নাম উঠেছে লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে। ইতিমধ্যে বহু সম্মানও পেয়েছেন তিনি।

কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরেই অধিকাংশ সময় কাটে তার। বাকি সময়টুকু পরিবারের সঙ্গেই কাটাতে পছন্দ করেন ডলি। দুই কন্যা আছে তার। ১২ হাত কাপড়ে ‘ম্যাজিক দেখানো’ ডলিকে বেশির ভাগ সময় ঘিরে থাকেন তারকারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *