দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব: দ্য ইকোনোমিস্ট

আন্তর্জাতিক স্পেশাল

মে ২৩, ২০২২ ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

দেশে দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। একটা বিপর্যয় আসন্ন। ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। খ্যাতনামা ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনোমিস্টের এক নিবন্ধে এমন আশঙ্কাই তুলে ধরা হয়েছে।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ওপর প্রভাব পড়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি ঘাটতির। বিশ্ব যখন সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত ঠিক তখনই শুরু হল রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ। যা খাদ্য সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে। এরই মধ্যে দেশে দেশে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়।

ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বব্যাপী খাদ্যের ১০ ভাগের এক ভাগ সরবরাহ করে। তারা বিশ্বের গম রফতানির ৩০ শতাংশের পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে। কমপক্ষে ২৬টি দেশ তাদের অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যশস্যের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সংঘাতের ফলে ইউক্রেনের খাদ্য উৎপাদন থমকে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, বন্ধ হয়ে গেছে খাদ্যশস্য রফতানি।

গত বছরের জুলাইতে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রাশিয়া বিশ্ব চাহিদার ১৬ শতাংশ গম রফতানি করে। এক্ষেত্রে ইউক্রেনের অবদান ছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় দেশ দুটি শস্য রফতানি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়।

ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের (ইএইইউ) বাইরে গম, রাই, যব ও ভুট্টা রফতানি ৩০ জুন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে। এদিকে ইউক্রেন ওডেসাতে একমাত্র অবশিষ্ট বন্দর বন্ধ করে দিয়েছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কুয়েত থেকে কাজাখস্তান পর্যন্ত অন্তত ২৩টি দেশ খাদ্য রফতানিতে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। মূলত, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেই দেশগুলো এমন সিদ্ধান্ত নেয়। সার রফতানি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এখন বাণিজ্য থেমে গেলেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থার তথ্য বলছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের ২০-৩০ শতাংশ জমি ২০২২ সালের মৌসুমে অনাবাদী বা চাষের আওতার বাইরে থেকে যাবে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই গমের দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। আরও ৬ শতাংশ বেড়ে যায় ভারতের গম রফতানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের পর।

ইকোনোমিস্টের নিবন্ধ বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে নতুন করে শত শত কোটি মানুষ দারিদ্রের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ইতোমধ্যে এক বেলা খেলে আরেক বেলা খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১৬০ কোটি। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে প্রায় ২৫ কোটি। পাশাপাশি আরও কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্র্যতার মধ্যে পড়তে পারে।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস সামনের দিনগুলোতে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা যাবে বলে সতর্ক করেন। বিশ্ব সম্প্রদায়কে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইউক্রেনের কৃষিনীতি ও খাদ্যমন্ত্রী মাইকোলা সলস্কি বলেন, চলতি বছর প্রতি টন গমের দাম বেড়ে ৭০০ ডলারে দাঁড়াতে পারে, যা বর্তমানের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। এখন প্রতি টন গম বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ ডলারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *