তাইওয়ানকে ঘিরে কী করতে যাচ্ছে চীন

তাইওয়ানকে ঘিরে কী করতে যাচ্ছে চীন

আন্তর্জাতিক

এপ্রিল ৯, ২০২৩ ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ

তাইওয়ানকে ঘিরে ফেলার মহড়া শুরু করেছে চীনের সামরিক বাহিনী, যেটি আগামী তিনদিন ধরে চলবে। এই মহড়াকে তাইওয়ান সরকারের প্রতি এক কড়া হুঁশিয়ারি বলে উল্লেখ করেছে চীন। খবর বিবিসির।

এদিকে, চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের এমন মহড়ায় বিশ্বে নতুন শঙ্কা দানা বাঁধছে।

চীনের পক্ষ থেকে এই মহড়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন শার্প সোর্ড’। এটি আগামী সোমবার পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড।

এদিকে, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন যুক্তরাষ্ট্রে সফর শেষে দেশে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামরিক মহড়া শুরু করে চীন।

প্রসঙ্গত, তাইওয়ান নিজেদেরকে একটি সার্বভৌম দেশ বলে গণ্য করে। দেশটির নিজস্ব সংবিধান এবং নির্বাচিত সরকার আছে। কিন্তু চীন মনে করে এটি তাদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ। একদিন এটি বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং এজন্য প্রয়োজনে তারা শক্তি প্রয়োগে প্রস্তুত।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও এমন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের পুনরেকত্রীকরণ লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হতে হবে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ৪২টি চীনা সামরিক বিমান এবং আটটি যুদ্ধ জাহাজ তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে। এই মধ্যরেখাকে চীন এবং তাইওয়ানের মাঝখানে অঘোষিত সীমারেখা বলে ধরা হয়।

সামরিক মহড়া ঘিরে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমেও নানা সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, সামরিক মহড়ার সময় তাইওয়ান দ্বীপের চারপাশে যুগপৎ টহল এবং অগ্রাভিযান চালানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে তাইওয়ানকে একদম ঘিরে ফেলার মাধ্যমে একটি ‘প্রতিরোধমূলক অবস্থান’ নেয়া হচ্ছে।

তারা বলছে, সামরিক মহড়ায় দূর-পাল্লার রকেট, নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার, ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজ, বিমানবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ, বোমারু বিমানসহ অনেক অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে।

যদিও চীন মাঝে-মধ্যেই তাইওয়ানের চারপাশ ঘিরে মহড়া দেয়। কিন্তু এবার দ্বীপটি ঘিরে চীন যে মহড়া শুরু করেছে, সেটিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই যে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে দেখা করে এসেছেন, তার পাল্টা ব্যবস্থা বলে মনে করা হচ্ছে।

শনিবার প্রেসিডেন্ট সাই বলেছেন, ‘তার সরকার যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাবে। কারণ তাদের দ্বীপটি এখন চীনের দিক থেকে ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদী সম্প্রসারণবাদের মুখোমুখি হচ্ছে।’ তাইপে সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের এক কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাকল। তিনি বলেন, তাইওয়ানকে অস্ত্র সরবরাহের লক্ষ্যে ওয়াশিংটন কাজ করছে। তবে এই অস্ত্র ‘যুদ্ধের জন্য নয়, শান্তির জন্য।’

এদিকে, চীনের সর্বশেষ সামরিক মহড়ার কারণে রাজধানী তাইওয়ানের মানুষকে মোটেই বিচলিত বলে মনে হচ্ছে না। দেশটির এক বাসিন্দা জিম সাই। তিনি বলেন, আমার মনে হয় তাইওয়ানের অনেক মানুষ এখন এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তাদের মনোভাবটা যেন, এই যে, আবার শুরু হয়ে গেল।

আরেক বাসিন্দা মাইকেল চুয়াং বলেন, ওদের (চীন) মনে হচ্ছে যে এই কাজটা করতে বেশ ভালো লাগে, তাইওয়ানকে এভাবে ঘিরে ফেলতে, যেন এই দেশটা ওদের। আমি এখন এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যদি ওরা আমাদের আক্রমণ করে, আমরা তো এমনিতেই পালাতে পারবো না। দেখি ভবিষ্যতে কী হয়, তারপর ঠিক করবো কী করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *