ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন ১০ মসজিদের ইতিহাস

ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন ১০ মসজিদের ইতিহাস

ফিচার স্পেশাল

মে ১৬, ২০২৩ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু মসজিদ। ঢাকার প্রতি ২০০ মিটারের মধ্যে আপনি একটি করে মসজিদ পাবেন। তবে ঢাকায় মোট কয়টি মসজিদ রয়েছে তা সঠিক ভাবে বলা কঠিন। এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী ঢাকায় ১০ হাজারের অধিক মসজিদ রয়েছে।

বাবরের মুঘল আমল থেকেই ঢাকা মসজিদের শহরে পরিণত হয়। পরবর্তীতে ১৯ শতকে পাকিস্তান আমলে মসজিদের নির্মাণ আরো বাড়তে থাকে। ঢাকায় সাত হাজার বছরের পুরনো মসজিদ যেমন রয়েছে, রয়েছে নব্য নির্মিত হাজারো মসজিদ। মূলত ঢাকা শহরের মসজিদের সংখ্যা গরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে ঢাকাকে মসজিদের শহর বলা হয়। তবে ছোট বড় মসজিদের ভিড়ে এখনো সৌন্দর্যের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে প্রাচীন মসজিদ গুলো। আজ জানবো ঢাকার প্রাচীন দশটি মসজিদ সম্পর্কে।

বিনিত বিবির মসজিদ

বিনত বিবির মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা শহরের পুরান ঢাকা এলাকায় অবস্থিত একটি মধ্যযুগীয় মসজিদ। নারিন্দা পুলের উত্তর দিকে অবস্থিত এই মসজিদটির গায়ে উৎকীর্ণ শিলালিপি অনুসারে ৮৬১ হিজরি সালে অর্থাৎ ১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে তার কন্যা মুসাম্মাত বখত বিনত বিবি এটি নির্মাণ করান। নারিন্দার যে প্রাচীন পুলের পাশে মসজিদটি অবস্থিত, তার নাম হায়াত বেপারির পুল। মসজিদটি চৌকোনা এবং এতে দুইটি গম্বুজ ও চারটি মিনার রয়েছে। এই মসজিদটি ঢাকার সবচেয়ে পুরাতন মুসলিম স্থাপনার নিদর্শন হিসাবে অনুমিত।

বিনিত বিবির মসজিদ

বিনিত বিবির মসজিদ

চক বাজার শাহী মসজিদ

পুরোনো ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত মুঘল আমলের মসজিদ। মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খান এটিকে ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন। তিনটি গম্বুজ আর বিশাল মিনার এ মসজিদটির মূল আকর্ষণ।

চক বাজার শাহী মসজিদ

চক বাজার শাহী মসজিদ

কর্তালাব খান মসজিদ

পুরোনো ঢাকার বেগম বাজারে অবস্থিত এ মসজিদটি বেগম বাজার মসজিদ নামেও পরিচিত। ১৭০১ থেকে ১৭০৪ সালের মধ্যে নির্মিত এই মসজিদটি তৎকালীন দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খানের নামে করা হয়। মুর্শিদ কুলি খান কর্তালাব খান নামেও পরিচিত ছিলেন।

কর্তালাব খান মসজিদ

কর্তালাব খান মসজিদ

তারা মসজিদ

মুঘল স্থাপত্যশিল্পের ঐতিহ্যকে ধারণ করে পুরান ঢাকায় নির্মাণ করা হয় তারা মসজিদ। সতেরো শতকের দিল্লি, লাহোর আর আগ্রায় নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনার আদলেই এটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটির অবস্থান পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ৬/৩ আবুল খয়রাত রোডে। ‌পরে ১৯২৬ সালে ঢাকার ব্যবসায়ী আলী জান ব্যাপারী মসজিদটির সংস্কার করেন।

তারা মসজিদ

তারা মসজিদ

মূসা খান মসজিদ

মুসা খানের মসজিদ বা মুসা খাঁর মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা শহরে অবস্থিত মোগল স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত একটি মসজিদ। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শহীদুল্লাহ হল ছাত্রাবাসের নিকটে ও কার্জন হলের পিছনে অবস্থিত। ধারণা করা হয় যে, এই মসজিদটি ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খান নির্মাণ করেন। ঢাকা শহরে বিনত বিবির মসজিদের পাশাপাশি এটি প্রাক-মুঘল স্থাপত্যের একটি নিদর্শন।

মূসা খান মসজিদ

মূসা খান মসজিদ

হাজী শাহবাজ মসজিদ

হাজী শাহাবাজের মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের রমনা এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মোগল শাসনামলে শাহজাদা আযমের সময়কালে ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মিত হয়। মসজিদটি হাইকোর্টের পিছনে এবং তিন নেতার মাজার এর পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। এর চত্ত্বরে হাজী শাহবাজের সমাধি অবস্থিত। দৈর্ঘ্যে মসজিদটি ৬৮ ফুট ও প্রস্থে ২৬ ফুট। এতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে।

হাজী শাহবাজ মসজিদ

হাজী শাহবাজ মসজিদ

লালবাগ শাহী মসজিদ

লালবাগ কেল্লার আধা কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ১৭০৪ ও ১৭০৫ খ্রিস্টাব্দে। মসজিদে পাওয়া দুটি ফার্সি অনুলিপি অনুযায়ী খান মোহাম্মদ মৃধা নামক জনৈক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।

লালবাগ শাহী মসজিদ

লালবাগ শাহী মসজিদ

খান মহম্মদ মৃর্ধার মসজিদ

খান মহম্মদ মৃর্ধার মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের পুরোনো ঢাকা এলাকার আতশখানায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে নায়েবে নাযিম ফররুখশিয়ারের শাসনামলে নির্মিত হয়। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের মতে ঢাকার প্রধান কাজী ইবাদুল্লাহের আদেশে খান মহম্মদ মৃর্ধা এটি নির্মাণ করেন। ১৭০৪ ও ১৭০৫ সালে তিনি নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।

খান মহম্মদ মৃর্ধার মসজিদ

খান মহম্মদ মৃর্ধার মসজিদ

কসাইটুলি মসজিদ

মসজিদটি পুরোনো ঢাকার কসাইটুলির পিকে ঘোষ রোডে অবস্থিত শতবর্ষী একটি মসজিদ। স্থানীয়ভাবে এটি ‘চিনির টুকরা মসজিদ’ নামে পরিচিত। মূলত, মসজিদের গায়ে চিনামাটির সাদা টুকরাগুলো দেখতে চিনির দানার মতো হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদটিকে এই নামে ডাকেন।

কসাইটুলি মসজিদ

কসাইটুলি মসজিদ

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। মসজিদটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত। ১৯৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

মসজিদে একসাথে ৩০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে, ফলে ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। তবে মসজিদটিতে জুমার নামাজ ছাড়াও বিশেষত রমজানের সময় অত্যধিক মুসল্লির সমাগম হয় বিধায়, বাংলাদেশ সরকার মসজিদের ধারণক্ষমতা ৪০ হাজারে উন্নিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *