টুইন টাওয়ার হামলার ২১ বছর

আন্তর্জাতিক স্লাইড

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ ১২:৪০ অপরাহ্ণ

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর; মঙ্গলবার। আজ থেকে ২১ বছর আগের এ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ছিনতাই করা চারটি বিমান নিউইয়র্কের দু’টি আকাশচুম্বী ভবনসহ কয়েকটি স্থানে আঘাত হানে। এতে মারা যান কয়েক হাজার মানুষ। এ হামলা ছিল শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ চমকে যান গোটা বিশ্বের মানুষ।

সেদিন নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবনে দু’টি বিমান বিধ্বস্ত করা হয়। প্রথম বিমানটি নর্থ টাওয়ারে ও দ্বিতীয় বিমানটি সাউথ টাওয়ারে আঘাত হানে। দু’টি ভবনেই আগুন ধরে যায়। ভবন দু’টির ওপর তলায় মানুষেরা আটকা পড়েন। দু’টি টাওয়ার ভবনই ছিল ১১০ তলা। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে দুটি ভবন মাটিতে ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় প্রাণ হারান প্রায় তিন হাজার মানুষ। কিন্তু সেদিন অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান কানাডীয় ব্যবসায়ী ব্রায়ান ক্লার্ক। তিনি ঐ সময় স্ট্যানলি প্রাইমনাথ নামের এক ব্যক্তির প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।

ব্রায়ান বলেন, ২০০১ সারের ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ টাওয়ারের ৮৪ তলায় কাজ করছি। সকাল ৯টা ৩ মিনিটে একটি বিমান ৭৭ থেকে ৮৫ তলার মাঝামাঝিতে আঘাত হানলো।

ঘটনার প্রায় ১০ বছর পরে এক সাক্ষাৎকারে ব্রায়ান বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ঘর তছনছ হলো কয়েক মুহূর্তেই সব লন্ডভন্ড হয়। প্রথম ধাক্কা সামলানোর মাত্র ১০ সেকেন্ডের মাথায় প্রচণ্ড ভয় পাই।

ঐ সময় তার সামনে সিঁড়ি ছিল। দ্রুত তিনি সিঁড়ি ধরে নিচে নামতে থাকেন। কিন্তু তিনি জানতেন না, যে সিঁড়ি ধরে তিনি নামছেন, তা ঠিক আছে কিনা। ৮১ তলায় নামার পর দেখেন, এক নারী দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিক উঠছেন। ঐ নারী আমাকে জানান, নিচে তিনি ধ্বংসস্তূপ ও আগুন দেখতে পেয়েছেন। তাদের দ্রুত সরে গিয়ে ছাদের দিকে উঠতে বলেন।

ঐ নারী ছাদের দিকে চলে গেলেও ব্রায়ান ও তাকে অনুসরণ করা অন্য সহকর্মীরা সেখানে দাঁড়িয়ে কোন দিকে যাবেন, ঠিক করতে থাকেন। ঐ সময় ব্রায়ান একটি শব্দ শুনতে পারেন। তিনি ৮১ তলায় একটি ধাক্কার মতো শব্দ শোনেন। তিনি ভালো করে শুনে বুঝতে পারেন কেউ বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছেন। ব্রায়ান দ্রুত নিচের দিকে নেমে যান। সেখানে তিনি একটি গর্তের মধ্যে একজনকে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি ফ্ল্যাশলাইটের আলোতে দেখতে পান কেউ একজন বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।

ঐ ব্যক্তি হলেন ফুজি ব্যাংকের কর্মী স্ট্যানলি প্রাইমনাথ। তিনি একটি বিমানকে তাদের দিকে ধেয়ে আসতে দেখে আগেই টেবিলের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অফিস ভবন ধ্বংস হলেও ঐ টেবিলের কারণে তিনি রক্ষা পান। তবে তিনি দেয়ালের নিচে একটি গর্তে আটকে পড়েন। কয়েকবারের প্রচেষ্টায় স্ট্যানলিকে ওপরে তুলতে পারেন ব্রায়ান।

নিচে নামার সময় অনেক ক্ষেত্রে ধোঁয়ায় ভরা ভাঙাচোরা সিঁড়ি পার হন তারা। ৯টা ৫৫ মিনিটে নিচের তলায় এসে পৌঁছান তারা। দুজন যখন ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন, এক অগ্নিনির্বাপণকর্মী দ্রুত দৌড়ে তাদের ঐ এলাকা ছাড়তে বলেন। কারণ, রাস্তায় তখন ভবনের বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ পড়ছিল। অগ্নিনর্বাপকের কথা শুনে দ্রুত দৌড়াতে থাকেন তারা। কিছু দূর দৌড়ে স্ট্যানলি পেছনে ফিরে দেখেন।

তিনি ব্রায়ানকে বলেন, মনে হচ্ছে ভবনটি ভেঙে পড়বে। ব্রায়ান দ্বিমত প্রকাশ করেন। কিন্তু তাদের কথা শেষ না হতেই সাউথ টাওয়ার ভেঙে পড়তে শুরু করে। ভবনটি ভেঙে পড়ার মাত্র ৪ মিনিট আগে সেখান থেকে বের হতে পেরেছিলেন তারা।

বিমানটি যেখানে আঘাত করেছিল, তার ওপরের সবকটি তলা ধসে পড়েছিল। সেখান থেকে মাত্র চারজন বাঁচতে পেরেছিলেন। ব্রায়ান ও স্ট্যানলি তাদের মধ্যে দু’জন।

ব্রায়ান বলেন, এ ঘটনার হাজারো অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়েছে। কেন আমি বেঁচে গেলাম। তারা কেন বাঁচতে পারলেন না? আমার কোনো কৃতিত্ব নেই। আমাকে মূলত জীবন উপহার দেওয়া হয়েছে। আমি সত্যিই ভাগ্যবান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *