খাবারে রেশনিং ছাড়া বাঁচার উপায় নেই

জাতীয় স্লাইড

আগস্ট ৮, ২০২২ ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ

জ্বালানি তেলের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পণ্যমূল্যে। অস্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধির পরের দিনই সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। সবজি থেকে শুরু করে ব্রয়লার মুরগি, ডিম, মাছ এবং শিশুখাদ্যসহ সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। বিক্রেতারা বলছেন, দাম আরও বাড়বে। অপরদিকে মানুষের আয় বাড়ছে না। ফলে অসহায় ক্রেতারা। তারা বলছেন, যে হারে দাম বাড়ছে, তাতে প্রয়োজনের অর্ধেক পণ্য কিনে বাড়ি ফিরতে হবে। সবচেয়ে সমস্যায় নিম্ন আয়ের মানুষ। অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বলছেন, নিম্ন আয়ের মানুষকে বাঁচাতে খাদ্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তায় যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তা আরও বাড়াতে হবে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেলের সঙ্গে অধিকাংশ পণ্য সম্পৃক্ত। ফলে পণ্যটির দাম বৃদ্ধিতে অসহনীয় হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাভিঃশ্বাস অবস্থা। এ অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিম্ন আয়ের মানুষকে সাপোর্ট দিতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, সরকারি সহায়তা ছাড়া তাদের টিকে থাকা কঠিন। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ বা সহায়তা বিতরণে আরও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। কারণ এর আগে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাদের প্রয়োজন তারা এ সুবিধা পায়নি।

শুক্রবার রাত থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৮০ টাকা থেকে ১১৪, অকটেনের দাম ৮৯ থেকে ১৩৫ এবং পেট্রলের দাম ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিজেলে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, অকটেনে ৫১ দশমিক ৬৯ এবং পেট্রলের দাম ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এরপর রোববার ছিল প্রথম কর্মদিবস। এদিন নিত্যপণ্যে এর সরাসরি প্রভাব দেখা গেছে।

রোববার রাজধানীর কাওরান বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা, যা তিন দিন আগেও ১৬০ টাকা ছিল। শিশু খাদ্যের মধ্যে প্রতি কেজি গুঁড়াদুধ বিক্রি হয়েছে ৭২০ টাকা, যা আগে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি হালি (চার পিস) ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা, যা আগে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, যা আগে ২৭-২৮ টাকা ছিল।

কাওরান বাজারের মুদি বিক্রেতা রাজন বলেন, এখন পর্যন্ত কয়েকটি পণ্যের দামে হেরফের হয়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। কারণ কিছু পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। সঙ্গে পরিবহণ খরচ বাড়বে। সব মিলে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার ফলে ক্রেতাকে চাপে পড়তে হবে। তিনি জানান, তিনি বিক্রেতা হলেও দিন শেষে তিনিও ক্রেতা। তাই এই চাপ তার ওপরও পড়বে।

খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা। প্রতি কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ৭০-৮০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, বেগুন ৫০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ৫০-৭০ টাকা। করলা, কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাঁচকলা, করলা বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। বাজারে আকার ভেদে কেজিপ্রতি পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, যা আগে ১৬৫-১৭০ টাকা ছিল। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে রুই, কাতল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩২০ টাকায়। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে কই মাছ বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩২০ টাকা, শিং ৫৫০-৬০০ টাকা, মাগুর ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

রাজধানীর কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা হালিমা বেগম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের আয় কম ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে আমরা চিন্তিত। সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে ও পরিবার নিয়ে কী খেয়ে বাঁচব তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এবার আরেক দফা দাম বাড়ছে। আগে থেকেই চাহিদার তুলনায় কম পণ্য কিনছি। খাবার কমিয়ে দিয়েছি। এবার মনে হচ্ছে বাজার থেকে সব ধরনের পণ্য চাহিদার তুলনায় অর্ধেক কিনতে হবে।

জানতে চাইলে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। ইতোমধ্যে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে অতিমাত্রায় যাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে ঠকানো না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তাই তদারকি জোরদার করতে হবে।

এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বাজারে পণ্যের যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর নতুন করে যৌক্তি দর নির্ধারণের বিষয়ে অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সার্বিক দিক বিবেচনা করে পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে তা ওয়েবসাইটে দেয়া আছে।

তবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহণ খরচ কত বাড়বে তা বিবেচনা করে এখনো পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়নি। সব কিছু বিবেচনা করে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যৌক্তিক দর নির্ধারণ করা হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা সার্বিকভাবে বাজার তদারকি করছি। কেউ যাতে কোনো পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে না আড়ায় সেদিকে আমরা লক্ষ রাখছি। কোনো অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *