কে এই স্কালোনি, যাকে মেসিদের দায়িত্ব দিতে অনীহা ছিল সবার

কে এই স্কালোনি, যাকে মেসিদের দায়িত্ব দিতে অনীহা ছিল সবার

খেলা স্লাইড

ডিসেম্বর ২০, ২০২২ ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ

ফুটবল বিশ্বকাপের ২০১৮ সালের আসর। রাশিয়া বিশ্বকাপে মেসিদের শূন্য হাতে বিদায় নিতে দেখে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল এক ভদ্রলোকের। তখন তিনি একটা পণ করেছিলেন। এই দলটার দায়িত্ব নিয়ে দেশের জন্য কিছু একটা করবেন। তারপরের গল্প তো রচিত হলো লুসাইলের আলো ঝলমল রাতে।

ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে দীর্ঘ তিন যুগ পর শিরোপা জিতলো আর্জেন্টিনা। দলের সাফল্যের পেছনের নায়ক এই ভদ্রলোকের নাম লিওনেল স্কালোনি। মেসিদের কোচ। স্কালোনির গল্পটা অন্যরকম। বাকি দশজনের মতো একই ধারার নয়।

খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার খুব বেশি আকর্ষণীয় নয় স্কালোনির। মাত্র ৬ বছর আগে তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। মূল দলের কোচ হিসেবে স্কালোনির অভিষেক আর্জেন্টিনার ডাগআউটেই। ২০১৮ বিশ্বকাপে কোচ হোর্হে সাম্পাওলির সহকারী ছিলেন।

বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় বরখাস্ত সাম্পাওলির স্থলাভিষিক্ত হন স্কালোনি। কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়ে গড়ে তুলেছেন অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে দুর্দান্ত একটি দল। ভিন্ন ঘরানার ফুটবল কৌশল এঁকে আর্জেন্টিনাকে দীর্ঘ ২৮ বছর পর এনে দিয়েছেন কোপা শিরোপা।

স্কালোনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন একটা হারের ভেতর দিয়ে। তারপর লিওনেল মেসিকে কেন্দ্র করে তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে কোপা আমেরিকা জিতে পা রাখেন কাতার বিশ্বকাপে। মাঝে টানা তিন বছর আর হারেননি।

কিন্তু সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে অপ্রত্যাশিত হার দিয়ে শুরু হয় কাতারের অভিযাত্রা। এমন হারে খাদের কিনারায় পৌঁছায় আর্জেন্টিনা। তবে ওই ধাক্কাকে শক্তিতে পরিণত করে একে একে সব বাধা টপকে ফাইনালে উঠলো আলবিসেলেস্তেরা।

এরপর তো ফাইনালে কাতার দেখলো মরুর বুকে এক ল্যাতিন যুবকের অশ্রু ঝরানোর রাত। যে অশ্রুতে কাটলো ৩৬ বছরের শিরোপা খরা। দলটাকে এতোটা কিভাবে বদলে ফেললেন স্কালোনি? তার সঙ্গে শিষ্যদের সম্পর্কটাও মধুর কিনা, সেজন্যেই বোধহয়।

৪৩ বছর বয়সী এই কোচ শিষ্যদের বুঝিয়েছেন জাতীয় দলের জার্সির মর্যাদা। তাতে আর্জেন্টিনা দলে গড়ে উঠেছে দারুণ সংস্কৃতি। ব্রাজিলকে হারানোর পর সাফল্যের পেছনের গল্পটা বলছিলেন স্কালোনি, ‘এই দলটাকে বোঝাতে পেরেছি সাদা-আকাশী নীল জার্সির মূল্য। আর এ থেকেই তারা হয়েছে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও একাতাবদ্ধ। এগিয়ে যাওয়ার জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ।’

বিশ্বকাপে স্কালোনিকে দেখে মনে হয়েছে বেশ হিসেব আর পরিকল্পনা করেই মাঠে নামেন তিনি। এই বিশ্বকাপে তিনি কোনো দুটো ম্যাচে একই ফরমেশনে খেলা শুরু করেননি। প্রতিটি ম্যাচে আলাদা ফরমেশন এবং ম্যাচের মধ্যে এনেছেন এক বা একাধিকবার বদল।

পুরো আসরের দিকে তাকালে দেখা যায়, কখনো ৪-৪-২, কখনো ৫-৩-২, কখনো ৪-৩-৩ ফরমেশনে দলকে খেলিয়েছেন এই কোচ। প্রতি ম্যাচে প্রতিপক্ষের শক্তি অনুযায়ী ফরমশেন বদলেছেন। ফাইনালেও দেখালেন তার ঝলক।

স্কালোনি কখনো আর্থিক দিক কিংবা নিজের সুবিধার দিকটা ভাবেননি। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতাই ছিলো তার ধ্যানজ্ঞান। তার ভাষায়,‘যখন আমি কোচ হয়েছিলাম, তখন থেকেই আমার জানা ছিল এটাই আমার ধ্যানজ্ঞান। এটা আমার দেশের জন্য, যারা এত বছরের কষ্ট স্বীকার করেছে, এখনো সমর্থন দিচ্ছে তাদের জন্য অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা। ‘

তিনি আরো বলেন, ‘আমি যা করছি, প্রত্যেক আর্জেন্টাইনই তাই করতো যখন আপনি আপনার দেশ, জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমার খেলোয়াড়রা যা করছে, সেটা না করা অসম্ভব। এটা রোমাঞ্চকর, আবেগময়।’

একটা মজার ব্যাপার হলো, মেসি যখন জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামেন, স্কালোনি তখন তার সতীর্থ। ২০০৬ সালের সেই গল্প দেড় দশক পর এসে রূপ নিলো গুরু-শিষ্য যুগলবন্দিতে। স্কালোনি পারেন বলেই এই জুটিতে আজ বুয়েন্স আয়ারসের ঘরে ঘরে উৎসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *