এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াবে।

এপ্রিলে লোডশেডিং ছাড়াতে পারে ২ হাজার মেগাওয়াট

জাতীয় স্লাইড

মার্চ ১৭, ২০২৩ ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ

এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াবে। তীব্র গরম, রমজানের অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা, সেচের জন্য ব্যবহৃত বাড়তি বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে এই চাহিদা তৈরি হতে পারে, যা চলতে পারে আগামী জুন পর্যন্ত।

এতে আসন্ন রমজানে রোজাদার ও সেচ গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। এ অবস্থায় গ্রামের মানুষ আর শিল্প-কলকারখানার মালিকদের জন্য এই সময়ে আরও বড় রকমের দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে।

এদিকে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় সর্বত্র জেনারেটর আর আইপিএস বিক্রির ধুম পড়েছে। সবচেয়ে বেশি জেনারেটর বিক্রি হচ্ছে আবাসিক ভবন আর শিল্প-কলকারখানায়।

দেশের সবচেয়ে বড় জেনারেটর উৎপাদনকারী কোম্পানি এনার্জিপ্যাকের চিফ বিজনেস অফিসার মাসুম পারভেজ বলেন, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু এখনো শিল্পকারখানার মালিকরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তাদের জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। মার্চের শুরু থেকে এই চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। এপ্রিলের দিকে এই চাহিদা এক লাফে ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছাবে। রোজা এবং কৃষকদের সেচ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এই চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াটেও পৌঁছাতে পারে। বর্তমানে চাহিদা কম থাকায় সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ।

এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপের উৎপাদিত ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর বাইরে কয়লা আমদানির ধারাবাহিকতা সাপেক্ষে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসতে পারে সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসতে পারে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট।

আর মাতারবাড়ী ও বরিশালের বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনসহ এসব বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরও ৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ যোগ হতে পারে।

কিন্তু এর পরও ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি থেকে যাবে বলে জানিয়েছে খোদ পিডিবি। কোম্পানিটির একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছরের গ্রীষ্মেও চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন ঘাটতি ছিল দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। এদিকে এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও উৎপাদনে ফিরেছে। এতে কিছুটা সহনীয় হয়েছে লোডশেডিং।

পিডিবি বলছে, দেশে ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের মধ্যে গ্যাসচালিত ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ, ফার্নেস অয়েলচালিত ২৫ দশমিক ২ শতাংশ, কয়লাভিত্তিক ১১ দশমিক ১ শতাংশ এবং ডিজেলচালিত ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যুগান্তরকে বলেন, গ্যাস, কয়লাসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি অব্যাহত থাকলে সংকট খুব বেশি হবে না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সব ধরনের জ্বালানি আমদানিতে মাসে গড়ে অন্তত ১২৫ কোটি ডলার লাগে। বিশ্ববাজারে এলএনজি, কয়লার দাম কিছুটা কমতির দিকে।

গ্রীষ্মে আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি আছে। ইতোমধ্যে এলএনজি আমদানি বাড়ানো হয়েছে। এখন মূল চ্যালেঞ্জ ডলারের জোগান। তাহলেই সংকট গত বছরের মতো তীব্র হবে না বলে আমরা মনে করছি।

পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, গ্রীষ্মের বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। আমরা পেট্রোবাংলাকে বলেছি, আমাদের যদি সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়, তাহলে ১৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের দরকার হবে। এটা পুরোপুরি না পেলেও আমরা আশা করছি ১২০০ ঘনফুট পাব। এটা পেলেও আমরা ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অনায়াসে উৎপাদন করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘রামপাল, পায়রা ও বরিশালের একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আর বড়পুকুরিয়া মিলিয়ে কয়লা থেকে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাবে। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আরও ৪০০ মেগাওয়াটের মতো পাওয়া যাবে।’ এভাবেই গ্রীষ্ম মৌসুম কভারের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের অর্থ দেরিতে ছাড় হওয়ায় তহবিল সংকটে পড়েছে দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো (আইপিপি)। আবার ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আইপিপি উদ্যোক্তাদের। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর জ্বালানি তেলের মজুত কমে এসেছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের কাছে আইপিপিগুলোর বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল পাওনা রয়েছে। এ বিল আটকে থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে চলতি মূলধনের সংকটে ভুগতে হচ্ছে। আবার টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় অঙ্কের লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে ডলার সংকট। এলসি খোলার জন্য চাহিদামাফিক ডলারের জোগান দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

আগে এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সহায়তা পাওয়া গেলেও বর্তমানে এ প্রক্রিয়াটিও ধীর হয়ে এসেছে। আইপিপিগুলোর কাছে যে জ্বালানি তেল আছে, তা দিয়ে কোনোমতে মার্চ পর্যন্ত চালানো সম্ভব। আবার সেটুকুও ওই পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ করার মতো পর্যাপ্ত নয়। এপ্রিলের জন্য জ্বালানি তেল আমদানি না করা গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। এতে দেশে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা বাড়বে।

অর্থ সংকটের কারণে গত বছরের মে মাসের পর থেকেই আইপিপিগুলোর বিল বিলম্বিত হতে শুরু করে। একপর্যায়ে বকেয়া বিল জমতে জমতে সাড়ে ছয় মাসের জমে যায়, যার পরিমাণ ২২ হাজার কোটি টাকা। যদিও এখন এর পরিমাণ কিছু কমে ১৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ বকেয়া থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন চলতি মূলধন সংকটে পড়েছে।

অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ডলার সংকটের প্রভাবে এলসি খুলতে পারছে না অনেকেই। এতে এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি তেলের মজুতও কমে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বকেয়া বিল পরিশোধ ও ডলারের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের দাবি তুলেছেন বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *