এক দশকে যত ভয়াবহ পদদলের ঘটনার স্বাক্ষী বিশ্ব

এক দশকে যত ভয়াবহ পদদলের ঘটনার স্বাক্ষী বিশ্ব

ফিচার স্পেশাল

অক্টোবর ৩০, ২০২২ ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে হ্যালোইন উৎসবে পদদলনের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় আরো আহত রয়েছেন ৮২ জন। শুধু সিউলের ঘটনা নয়, গত এক দশকে কয়েকটি ভয়াবহ পদদলের ঘটনা ঘটেছে।

সৌদি আরবের মিনায় পদদলন

মিনার বড় জামারাকে (বড় শয়তান) লক্ষ্য করে কঙ্কর মারতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

মিনার বড় জামারাকে (বড় শয়তান) লক্ষ্য করে কঙ্কর মারতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে সৌদি আরবের মিনায় পবিত্র হজ পালনকালে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৭১৭ জন হাজির মৃত্যু হয়। তখন আহত হন অনেকে। ঐ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা ২ হাজার ১১০ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছিল। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ ৯২৫ জনের মৃত্যুর কথা সর্বশেষ স্বীকার করেছিল। তবে কতজন আহত হয়েছিলেন তা জানায়নি রিয়াদ।

ঐ সময় সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন।

সৌদি আরবের সিভিল ডিফেন্সের পরিচালকের দফতর জানিয়েছিল, হজের শেষ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতা মিনার বড় জামারাকে (বড় শয়তান) লক্ষ্য করে কঙ্কর মারতে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পদদলিত হয়ে ৭১৯ জন হাজি আহত হন।

সিভিল ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, আহতদের মিনা অঞ্চলের চারটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। চার হাজারের মতো কর্মী  উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছেন। ঘটনাস্থলে ২২০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, তীব্র গরম ও হাজিদের তাড়াহুড়োর কারণে পদদলনের ঘটনা ঘটেছে।

ঐ পদদলের দুর্ঘটনাটি ২০৪ নম্বর সড়কের কাছে জামারাত সেতুর প্রবেশমুখ এলাকায় ঘটে। শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটেনি।

ঐ সময় কেন্দ্রীয় হজ কমিটির প্রধান প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সালের বরাতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আল-আরবিয়া টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এ দুর্ঘটনার জন্য ‘কিছু আফ্রিকান নাগরিক’ হাজিরা দায়ী।

২০১৫ সালে ২০ লাখের মতো মুসলমান হজ পালন করেন।

এর আগে, ১৯৯০ সালে হজ পালন করতে মক্কায় পদদলিত হয়ে ১ হাজার ৪২৬ জন হাজির মৃত্যু হয়। ১৯৯৮ সালে মিনায় (বড় শয়তান) লক্ষ্য করে কঙ্কর ছুড়ার সময় পদদলিত হয়ে ১৮০ হাজির মৃত্যু হয়েছিল। ২০০১ সালে মিনায় পদদলিত হয়ে মৃত্যু হয় ৩৫ জনের। ২০০৬ সালে মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় দুর্ঘটনায় ৩৬০ জনের বেশি হাজি মারা যান।

ইন্দোনেশিয়ার স্টেডিয়ামে পদদলন

উত্তেজিত দর্শকরা- ছবি: সংগৃহীত

উত্তেজিত দর্শকরা- ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে দিকে ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল ম্যাচে পরাজয় ঘিরে মাঠে প্রবেশ করে উত্তেজিত দর্শকরা। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে পদদলিত হয়ে মারা যান ১৭৪ জন। ঐ ঘটনায় আহত হন আরো ১৮০ জনের বেশি। তবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে ১৩৩ জনের মৃত্যুর দাবি করা হয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, পূর্ব জাভা প্রদেশের মালাং শহরের কানজুরুহান স্টেডিয়ামে স্থানীয় আরেমা ফুটবল ক্লাব চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পারসেবায়া সুরেবায়া দলের বিপক্ষে হেরে যাওয়ার পর উত্তেজিত দর্শকরা গ্যালারি থেকে মাঠে প্রবেশ করেন। পুলিশ তাদের দমাতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে আতঙ্কিত লোকজন স্টেডিয়াম থেকে বাইরে ওয়ার পথে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পদদলিত ও দম বন্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৩৪ জন। আর হাসপাতালে নেয়ার পথে ও হাসপাতালে মারা যান বাকিরা।

পূর্ব জাভার পুলিশ প্রধান নিকো আফিনতা বলেছিলেন, পুরো এলাকাটি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছিল। উত্তেজিত দর্শক পুলিশ কর্মকর্তাদের আক্রমণ করছিল, তারা গাড়ি ভেঙ্গে ফেলছিল। প্রায় ৩ হাজার লোক গ্যালারি ছেড়ে মাঠে ঢুকে পড়েছিল।

মধ্যপ্রদেশের উৎসবে পদদলন

মধ্যপ্রদেশের রতনঘড় মন্দিরের কাছের সেতু- ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রদেশের রতনঘড় মন্দিরের কাছের সেতু- ছবি: সংগৃহীত

২০১৩ সালের অক্টোবরে ভারতের মধ্যপ্রদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি উৎসবে পদদলিত হওয়ার ঘটনায় ১১৫ জনের মৃত্যু হয়। বিবিসি জানিয়েছিল, মধ্যপ্রদেশের রতনঘড় মন্দিরের কাছের সেতুতে আতঙ্ক ছড়ালে এ পদদলনের ঘটনা ঘটে। ঐ সময় সেতু থেকে লাফ দিয়ে নদীর পানিতে ডুবে মারা যান অনেকে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সেতুটি ভাঙার গুজব শুনে প্রাণ বাঁচাতে ছুটাছুটির সময় পদদলের ঘটনা ঘটে। নবরত্ম উৎসবের জন্য সেখানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।

দাতিয়া জেলার জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ডি কে আরইয়ার বরাতে এএফপি জানিয়েছিল, পদদলনের ঘটনায় ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহহত হয়েছেন ১১০ জন।

আইভেরিকোস্টের উৎসবে পদদলন

আবিদজানে পদদলিত হয়ে অন্তত ৬১ জনের মৃত্যু হয়-ছবি: সংগৃহীত

আবিদজানে পদদলিত হয়ে অন্তত ৬১ জনের মৃত্যু হয়-ছবি: সংগৃহীত

২০১৩ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে খ্রিস্টীয় নববর্ষ উদ্‌যাপন করতে গিয়ে দেশটির আবিদজানে পদদলিত হয়ে অন্তত ৬১ জনের মৃত্যু হয়। আর আহত মানুষের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।

আইভরি কোস্টের সামরিক বাহিনীর উদ্ধারকর্মীদের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইসা সাকো বলেছিলেন, প্রাথমিকভাবে ৬০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছে ২০০ জন। তবে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছিল, ৬১ জন মারা গেছেন আর আহত হয়েছে ৪৮ জন।

সাকো জানান, নববর্ষ বরণ উপলক্ষে আবিদজান শহরের প্রধান স্টেডিয়ামে আতশবাজির আয়োজন করা হয়েছিল। এতে অনেক মানুষ যোগ দেওয়ায় প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পায়ের নিচে চাপা পড়ে এত মানুষ হতাহত হয়।

সূত্র- বিবিসি, আলজাজিরা, এপি, এএফপি, আরব নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *