ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার, অভিযোগ ইমরান খানের

আন্তর্জাতিক স্লাইড

মে ৩০, ২০২২ ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারকে আবারও একহাত নিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। এবার তিনি সরকারের সমালোচনা করেছেন ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া নিয়ে। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ইসরাইলকে শিগগিরই স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার।

রোববার (২৯ মে) এক প্রতিবেদনে ডন জানায়, সম্প্রতি প্রবাসী পাকিস্তানিদের একটি প্রতিনিধি দল ইসরাইল সফর করেছে। দলটিকে স্বাগত জানান ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভায় এক বিশেষ বক্তব্যে বিষয়টি প্রকাশ করেন আইজাক। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে একে ‘বড় পরিবর্তন’ বলে অভিহিত করেন তিনি।

এ খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এদিন খাইবার পাখতুনখোয়ার চারসাদ্দার পিটিআই’র শ্রমিক সম্মেলনে বক্তব্যকালে ইমরান খান বলেন, এই সরকার কাশ্মীরের জনগণকে বিক্রি করে দিতে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি করবে। তার ওপর তারা আবার ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।

তবে শাহবাজ শরিফ সরকার অবশ্য বলছে, পাকিস্তান থেকে কোনো সরকারি কিংবা আধা-সরকারি কোনো প্রতিনিধিই ইসরাইল সফরে যায়নি কিংবা ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেনি।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসরাইল রাষ্ট্র। বিশ্বের বহু দেশই বিশেষ মুসলিম বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ইহুদিবাদী এই রাষ্ট্রকে আজও রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এর মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। ফলে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই দেশটির।

তবে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ইসরাইলের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্ভাব্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও ছিল আলোচনায়। যদিও সে সময় ইসলামাবাদ এটি নাকচ করে দেয়। তবে চাপাপড়া বিষয়টি আবারও সামনে আসে সম্প্রতি একটি পাকিস্তানি-আমেরিকান প্রতিনিধি দলের ইসরাইল সফরের পর।

দ্বিরাষ্ট্র সমাধান তথা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোর সমর্থক পাকিস্তান। এমনকি আব্রাহাম অ্যাকর্ডের পরও দেশটির সরকার স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, ফিলিস্তিনি সমস্যার ন্যায়ভিত্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলকে তারা স্বীকৃতি দেবে না।

পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও টেকসই শান্তির জন্য জাতিসংঘ ও ওআইসির প্রস্তাব অনুযায়ী দ্বিরাষ্ট্র সমাধান অনস্বীকার্য। আর সেটা অবশ্যই ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমানা ধরে ও আল কুদস তথা জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষণার মাধ্যমে হতে হবে।

প্রকাশ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও উভয় দেশই বেশ কিছুদিন ধরে অঘোষিত একটা যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। তবে সেটা খুবই নিম্ন স্তরে। এখন থেকে ১৭ বছর আগে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে এ ধরনের যোগাযোগ প্রথম ঘটে। সে সময় পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ কাসুরি ও ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলভান শালোমের মধ্যে একটি বৈঠক হয়।

পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম জিও টিভি জানায়, গত সপ্তাহে পাকিস্তানি-আমেরিকান একটি প্রতিনিধি দল ইসরাইল সফর করে। ইসরাইলপন্থি বেসামরিক সংস্থা ‘শারাকা’র অর্থায়নে ও চেষ্টায় এ সফর অনুষ্ঠিত হয়। সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২০ সালে, আব্রাহাম চুক্তির পর। আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

শারাকা ইসরাইলের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে। বর্তমানে ইসরাইল, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এর তিনটি শাখা রয়েছে।

গত ১৯ মে শারাকার পক্ষ থেকে এক টুইটার বার্তায় জানানো হয়, ইসরাইল সফরে পাকিস্তানের প্রথম অনুমতিপ্রাপ্ত ইহুদিসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম ও শিখদের একটি প্রতিনিধি দলকে প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের সঙ্গে সাক্ষতের জন্য আনতে পেরে শারাকা সম্মানিত বোধ করছে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেন।

পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি-আমেরিকান লবিস্ট আনেলা আলী। দলে পাকিস্তানিসহ অন্য দেশের মুসলিমরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বিদেশি এক সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রতিনিধি দল ইসরাইলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

প্রতিনিধি দলে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের কিছু ‘বিখ্যাত’ মুখও ছিলেন। কেউ কেউ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন। প্রতিনিধি দলে থাকা আহমেদ কোরাইশি রাষ্ট্রীয় টিভির কর্মী ছিলেন।

পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ও পিটিআই নেত্রী শিরিন মাজারি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে আমদানিকৃত সরকার তাদের অভিভাবকের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে লজ্জাজনক আনুগত্য প্রদর্শন করছে।

জবাবে কোরাইশি বলেছেন, ‘স্ব-নিযুক্ত ইসরাইলবিরোধী যোদ্ধা ড. শিরিন মাজারি ২০০৫ সালে আইএসএসআইয়ের (ইনস্টিটিউট অব স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদ) ডিজি ছিলেন। ওনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোরাইশির সময় প্রথমবার তুরস্কে পাকিস্তান ও ইসরায়েলের মধ্যে বৈঠক হয়। তখন তিনি আপত্তি জানাননি। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে বহাল ছিলেন।’

২০২১ সালের জুনে ইমরান খানের সাবেক সরকারের উপদেষ্টাদের ইসরায়েল সফর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় পিপিপি চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো বলেছিলেন, পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের ইসরায়েল সফর নিয়ে কিছু ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও পরে এ ধরনের সফরের কথা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *