আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ৪৬ সেবার ওপর নতুন ফি আরোপ

অর্থনীতি স্লাইড

আগস্ট ২৯, ২০২২ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ৪৬ ধরনের সেবার ওপর ‘নতুন ফি’ আরোপ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগে এসব সেবা পেতে উদ্যোক্তাদের কোনো ধরনের ফি গুনতে হয়নি। একই সঙ্গে ১৮ ধরনের সেবার ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে বিদ্যমান ফিও। এক্ষেত্রে বর্ধিত ফি শিল্প উদ্যোক্তাদের গুনতে হবে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সম্প্রতি আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হবে।

সরকার কৃচ্ছ সাধনের পাশাপাশি সংস্থাগুলো থেকে আয় বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা। যদিও বর্তমান ডলার সংকট, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও স্থানীয়ভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে এমনিতেই বেড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ। আর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকেন্দ্রিক নানা সেবার ফির মূল্যবৃদ্ধিতে আরেক দফা এ খরচ বাড়াবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিভিন্ন পর্যায়ে সেবার ওপর নতুন ফি আরোপ করতে সম্প্রতি আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এ দপ্তর। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন ফি আরোপ এবং পুরোনো ফি বাড়ানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ৫২ ধরনের সেবার মধ্যে আগে ৬ ধরনের ওপর ফি আরোপ ছিল। বাকিগুলোতে কোনো ধরনের ফি ছিল না। এখন বাকি ৪৬ ধরনের সেবার পর ফি আরোপ করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এ সিদ্ধান্তে সরকারের রাজস্ব কিছুটা বাড়বে।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। যদিও এ মন্ত্রণালয়কে আমরা অভিভাবক মনে করি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল। তিনি মনে করেন বিদ্যমান নানা সংকটের কারণে এমনিতে ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে। অপরদিকে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়মূল্য কমাচ্ছে। এতে একটি বড় সংকট সামনে এগিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে নানা ধরনের ব্যয় কমাতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। কিন্তু সেটি না করে নতুন ফি আরোপ যুক্তযুক্ত হবে না। আর যদি তাই হয় সেটি যেন সেপ্টেম্বর নয়, আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার পর কার্যকর করা হোক।

সূত্র মতে, যেসব প্রতিষ্ঠান ৫০ লাখ টাকার পণ্য আমদানি করছে সেক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি ১৮ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা, আর ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আমদানি সীমার ক্ষেত্রে ফি ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার পণ্য আমদানি সীমা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ফি ৪৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমদানি সীমার প্রতিষ্ঠানের ফি ৪৫ হাজার থেকে বেড়ে ৬০ হাজার টাকা, ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত সীমা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৪৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা এবং ১০০ কোটি বা তার বেশি প্রতিষ্ঠানের আইআরসি নিবন্ধন ফি ৪৫ হাজার থেকে বেড়েছে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এদিকে স্থানীয় শিল্পের ক্ষেত্রে ফরমালিন উৎপাদনের জন্য বিদ্যমান লাইসেন্স ফি আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি ফরমালিন আমদানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স ফি ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা এবং মজুত ও বিক্রির জন্য লাইসেন্স ফি ১ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে সোয়া লাখ টাকা ধার্য করা হয়।

এছাড়া আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে নতুন ফি আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও মনোনীত ব্যাংক পরিবর্তন, আমদানি সীমা ও স্বত্ব পরিবর্তন, আইপির মেয়াদ বাড়ানো, সংশোধন, হাসপাতাল, এনজিও ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্যের আইপিতে। এসব ক্ষেত্রে নতুন ফি আরোপ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি প্রকল্পে মালামাল খালাসের আমদানি পারমিট, ঋণপত্র খোলা ও জাহাজীকরণের সময়সীমা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও একই হারে ফি গুনতে হবে।

আরও যেসব ক্ষেত্রে নতুন ফি আরোপ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে প্রকল্পের মালামাল খালাস, মূলধনী যন্ত্রাংশ ছাড়করণ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল, জীবন্ত পশু খালাস, আইআরসি থেকে অব্যাহতি ও ক্লিয়ারেন্স পারমিট। এগুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে গুনতে হবে ৫ হাজার টাকা করে। এদিকে রপ্তানির ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, ইন্ডেটিং সার্ভিসের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং বহুজাতিক কোম্পানির ইআরসির ক্ষেত্রে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *