সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪ ৭:১১ পূর্বাহ্ণ
দখলদার ইসরায়েলের বিমান হামলায় গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিহত হন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরাল্লাহ।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে প্যারিজিয়েন জানিয়েছে, এই বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলকে নাসরাল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে গোপন তথ্য জানিয়ে দেন এক ইরানি গুপ্তচর। এরপরই ইসরায়েল তাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়।
লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি আরো জানিয়েছে, নাসরাল্লাহ শুক্রবার বৈরুতে হিজবুল্লাহর সদর দফতরে উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন নাসরাল্লাহ। তিনি যখন মাটির নিচে অবস্থিত সদর দফতরে প্রবেশ করেন তার কিছুক্ষণ পরই বিমান হামলা চালানো হয়। এতে ব্যবহার করা হয় বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। যা হিজবুল্লাহর সদর দফতরকে ধসিয়ে দেয়।
এদিকে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহর অবস্থান কয়েক মাস ধরেই জানতো ইসরায়েল। সংবাদমাধ্যমটি ইসরায়েলের তিনজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানায়।
অন্যদিকে ইসরায়েলি রিপোর্টে বলা হয়েছে, নাসরাল্লাহকে হত্যার জন্য অভিযান চালাতে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়নি।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, অভিযানের এই সিদ্ধান্ত যখন নেয়া হয় তখন লেবাননে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইসরায়েলের নেতাদের আলোচনা চলছিল। এছাড়া এরপর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিতে যান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের দু’জন কর্মকর্তা বলেছেন, লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতে এই অভিযানে ৮০টির বেশি বোমা ফেলা হয়। এতে ছয়টি ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। শুক্রবার চালানো এ হামলায় প্রথমদিকে ইসরায়েলি বাহিনী হাসান নাসরাল্লাহর নিহতের খবর নিশ্চিত করলেও হিজবুল্লাহ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে শেষমেশ শনিবার সকালে তারা হিজবুল্লাহপ্রধানের নিহতের খবর নিশ্চিত করে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, মূলত ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা বিভিন্নভাবে গুপ্তচর নিয়োগ করে। গোয়েন্দাদের নতুন দলটি তৈরি করা হয় সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকে। যেন সেনা এবং বিমান বাহিনীর কাছে তারা সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারে।
পাশাপাশি ইসরায়েলি সিগন্যাল গোয়েন্দা এজেন্সি ইউনিট অনেক অত্যাধুনিক সাইবার টুলস তৈরি করে। যেগুলো দিয়ে খুব সহজেই হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ডিভাইসে আঁড়ি পাতা যায়। সম্প্রতি তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যেসব সাফল্য পেয়েছে সেগুলো এসব গোয়েন্দা কার্যক্রমের কল্যাণেই এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসান নাসরাল্লাহকে হারানোর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে, গোষ্ঠীটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদে এর রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলকে পরিবর্তন করবে।
তবে ইসরায়েল বিরোধী এই সংগঠনটি হুট থমকে যাবে না। কারণ তারা এরইমধ্যে লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির এখনো হাজার হাজার যোদ্ধা আছে। এদের অনেকেরই সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা আছে এবং তারা প্রতিশোধ নেয়ার দাবি করেছে।
সংগঠনটির এখনো যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যার অনেকগুলোই দূরপাল্লার। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার মতো অস্ত্র আছে, যা তেল আবিব ও অন্য শহরগুলোতে পৌঁছাতে পারে।