সয়াবিন-পাম অয়েলে ভ্যাট প্রত্যাহার

অর্থনীতি স্লাইড

মার্চ ১৫, ২০২২ ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) অব্যাহতি ঘোষণা করেছে সরকার। এতদিন আমদানিনির্ভর এ দুই ধরনের তেলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো।

সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে এ ভ্যাট অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

এর আগে, সোমবার দুপুরে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসের সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, সয়াবিন ও পাম অয়েলের আমদানি পর্যায়েও ভ্যাট কমানো হবে। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটি ১০ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হবে।

এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ভোজ্যতেলে তিন স্তরে ভ্যাট রয়েছে। এর মধ্যে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও ব্যবসায়ী বা খুচরা বিক্রি পর্যায়ে ৫ শতাংশ। এর মধ্যে আগেই স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর সোমবার আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা আশা করছেন, এতে এ দুই ধরনের তেলের দাম কিছুটা কমবে।

গত বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান সয়াবিন ও পাম অয়েলে উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ লাখ টনই আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। আমদানি হয় প্রধানত সয়াবিন ও পাম অয়েল। এ দুই ধরনের তেল পরিশোধিত ও অপরিশোধিত অবস্থায় ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে আসে। বছরে প্রায় ১১ লাখ টন অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি হয়। আর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয় পাঁচ লাখ টন। এছাড়া ২৪ লাখ টন সয়াবিন বীজ আমদানি হয়। এসব বীজ থেকে চার লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানিসহ দেশের পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে দেশের বাজারে সরবরাহ করে। এ পরিশোধন ব্যবস্থাকে স্থানীয় উৎপাদন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সম্প্রতি ভোজ্যতেলের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিনের এক লিটার বোতলের ১৬৮ টাকা, ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৯৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর পাম অয়েলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

বর্তমানে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত দরে বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৫-১৭০ টাকা, ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৯০-৮৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে না। পাম অয়েল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা দরে। তবে সব ধরনের তেলের সরবরাহ কম।

ব্যবসায়ীরা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাড়তি দামের প্রস্তাবে সায় দেয়নি।

ভোজ্যতেলের বড় পরিশোধনকারী কোম্পানি সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারে ভোক্তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন না। কারণ এই দুই পর্যায়ে যে ভ্যাট হয় সেটি খুব বেশি না। অন্যদিকে সম্প্রতি বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরো বেড়েছে। ফলে আগামীতে দাম সমন্বয়ের বিকল্প নেই।

ট্যারিফ কমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভোজ্যতেলে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট পরিশোধ হয় সবচেয়ে বেশি। এরপর উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আমদানি পর্যায়ের পরিশোধ করা ভ্যাট সমন্বয় করে বাকিটা দেওয়া হয়। উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে সব মিলিয়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ৮-৯ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট হয়। তবে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট আদায় হয় না বলে প্রতি লিটারে এর প্রভাব সর্বোচ্চ ৬ টাকা। তবে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে প্রতি লিটারে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত দাম কমতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *