ওষ্ঠরঞ্জনী বা লিপস্টিক (Lipstick) হচ্ছে এক প্রকার প্রসাধনী দ্রব্য, যা বিভিন্ন রকম পদার্থের সন্নিবেশে তৈরি হয়। মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তা ঠোঁটে লাগান নারীরা। চলুন আজ জেনে আসি লিপস্টিকের আদ্যপান্ত।
লিপস্টিকের ইতিহাস
প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার নারীদের মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ঠোঁটে লিপস্টিক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। মিশরীয়রা সামুদ্রিক আগাছা থেকে আরোহিত পার্পল-লাল রং এর এক প্রকার পদার্থের সাথে আয়োডিন ও কিছু ব্রোমিন মিশিয়ে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করতেন। ওই পদার্থ লিপস্টিক হিসেবে প্রয়োগ করা হতো। রানী ক্লিওপেট্রা তার ঠোঁটে লিপস্টিক ব্যবহার করতেন, যা তৈরি হতো মেরুন রঙের বিটল পোকা থেকে। এর ফলে ঠোঁটে একটি গাঢ় লাল আভা ফুটে উঠতো।
কীভাবে তৈরি হয় লিপস্টিক?
লিপস্টিক তৈরি করতে মূলত চারটি উপাদান ব্যবহার করা হয়। এগুলো হচ্ছে মোম, তেল, রঞ্জক এবং অ্যালকোহল। লিপস্টিকে দেওয়া মোম ও তেলের অনুপাত- রঞ্জক পদার্থ এবং অ্যালকোহলের অনুপাতের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। প্রথমে তেল, মোম এবং অ্যালকোহল এই তিনটি মৌলিক উপাদান গলানো হয়। এবং এগুলোকে একত্রে মিশ্রণ করে লিপস্টিকের বেস তৈরি করা হয়। এরপর সেই গলিত বেজে পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থ যুক্ত করা হয়। একেকটি রঙ এবং শেডের জন্য বিভিন্ন পরিমাণে রঞ্জক ব্যবহার করা হয়। এই রঞ্জকগুলো তরল বা পাউডার যেকোন ধরণেরই হতে পারে।
মিশ্রণটি কোমল হওয়ার জন্য এবং যাতে দলা পাকিয়ে না থাকে এ কারণে একটি রোলার মেশিন দ্বারা একে ভালোভাবে রোলিং করা হয়। রোলার মেশিন মিশ্রণ থেকে অতিরিক্ত তেল বের করে ফেলে। যে কারণে রোলিং মাধ্যমে মিশ্রণটি সামান্য কঠিন আকার ধারণ করে। আর একইসঙ্গে একটি স্মুদ টেক্সচারে পরিণত হয়।
এরপর সম্পূর্ণ মিশ্রণটি বড় একটি পাত্রে ঢালা হয়। যেখান থেকে এগুলোকে ছোট ছোট ব্যাচে বিভক্ত করা হয়। এরপর মিশ্রনটি আবার গলানো হয় এবং এতে সুগন্ধী মেশানো হয়। তারপর গলিত দ্রব্য একটি ধাতব ছাঁচে ঢালা হয় যেটায় লিপস্টিকের প্রকৃত আকার অনুযায়ী একসঙ্গে অনেকগুলো ফাঁকা স্টিক থেকে থাকে।
সম্পূর্ণ মিশ্রণটি বড় একটি পাত্রে ঢালা হয়।
এবার এগুলো জমাট বাধা এবং শক্ত হওয়ার জন্য রেফ্রিজারেটরে রাখার পালা। রেফ্রিজারেটরে ৫ মিনিটের জন্য লিপস্টিক মোল্ড বা ছাঁচটি রাখা হয়। শক্ত হয়ে গেলে লিপস্টিকগুলো ছাঁচ থেকে বের করা হয় এবং বিভিন্ন আকারের লিপস্টিক-হোল্ডার বা খাপে রাখা হয়। এভাবেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিগুলোয় লিপস্টিক তৈরি করা হয়। এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
লিপস্টিক ব্যবহারের উপকারিতা:
লিপস্টিক যে শুধুমাত্র ঠোঁট বা মুখের সৌন্দর্য্যই বাড়ায়, তা কিন্তু নয় বরং ঠোঁট আর্দ্র এবং নরম রাখতেও লিপস্টিক খুব সাহায্য করে। ক্রিম লিপস্টিক, আর্দ্র লিপস্টিক কিংবা গ্লসি লিপস্টিক ঠোঁটকে নরম রাখতে এবং ফাটল থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
প্রত্যেকটি জিনিসেরই একটি ভালো এবং খারাপ উভয় দিকই রয়েছে। ঠিক তেমনই লিপস্টিকও এর ব্যতিক্রম নয়।
লিপস্টিকের অপকারিতা:
অতিরিক্ত লিপস্টিকের ব্যবহারে ঠোঁটের লোমকূপ ছোট হয়ে যেতে পারে, যেটি ঠোঁটের চামড়ার নমনীয়তা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অনেক সময় এটি ঠোঁটকে শুষ্ক করে ফেলে এবং ক্ষেত্র বিশেষে ঠোঁট তার নিজস্ব রঙ এবং স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, লিপস্টিকে যে সকল ম্যাগনেসিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ব্যবহৃত হয়, সেগুলো অত্যন্ত বিপদজনক রোগ এবং শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়।
এ ছাড়াও কিছু কিছু লিপস্টিকে সীসা ব্যবহার করা হয়, যেগুলো স্নায়ুতন্ত্রের বিরাট ক্ষতিসাধন করতে পারে। সব ধরনের ঠোঁটের জন্য একইরকম লিপস্টিকের ব্যবহার উপযুক্ত নয়।