মার্চ ২৮, ২০২২ ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ
ঢাকা মহানগরে চলাচল করা সব রিকশা নিবন্ধনের আওতায় আনার পাশাপাশি চালকদের নিতে হবে লাইসেন্স। একই সঙ্গে ১৮ থেকে ৫০ বছর রিকশাচালকের বয়স থাকতে হবে। রিকশায় থাকতে হবে নতুন রং, কুশন প্রভৃতি। বন্ধ করা হবে ইচ্ছেমতো মালিকদের জমা আদায়। দূরত্ব অনুযায়ী ট্রাফিক অঞ্চলভেদে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে ভাড়া।
এসব নিয়ম রেখে ২১ মার্চ ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল (নিয়ন্ত্রণ) প্রবিধান’-এর গেজেট জারি করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটিও এমন প্রবিধান করতে যাচ্ছে বলে জানা যায়।
এতে আরো বলা হয়েছে, রিকশার ভেতরে বা বাইরে কোনো রকম বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন বা অশ্লীল ছবি/চিত্র সাঁটানো যাবে না।
প্রবিধান অনুযায়ী, অনিয়মের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং নিবন্ধন-লাইসেন্স বাতিল ও রিকশা জব্দ করতে পারবে সিটি কর্পোরেশন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা বলেন, রিকশা বা অযান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে তেমন কোনো বিধিবিধান ছিল না। প্রবিধানটি করা খুব দরকার ছিল, সেটি হয়েছে। আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রবিধানের গেজেটও করেছি। আমরা এখন এটি ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের দিকে যাবো। প্রবিধানের আলোকে আমরা ব্যবস্থা নেবো। আমরা কিছু রিকশার লাইসেন্সও দেওয়া শুরু করছি।
তিনি বলেন, এই প্রবিধানের আওতায় অযান্ত্রিক যানবাহনকে আমরা একটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসবো। রিকশাচালকেরও লাইসেন্স লাগবে। আরও কিছু নতুন বিষয় এসেছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। আশা করছি ভালো কিছু হবে।
প্রবিধান অনুযায়ী, করপোরেশনের অঞ্চল বা ওয়ার্ডভিত্তিক ‘অযান্ত্রিক যানবাহন ব্যবস্থাপনা শীর্ষক কমিটি’ দায়িত্ব পালন করবে। কমিটির আহ্বায়ক হবেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা/মেয়রের মনোনীত কর্মকর্তা/ওয়ার্ড কাউন্সিলর। সাত সদস্যের এই কমিটিতে শ্রমিক, রিকশা মালিক ও চালক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদ আহাম্মদ বলেন, অযান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে আমরাও একটি প্রবিধান করছি। একটি খসড়া করা হয়েছে, খসড়াটি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অংশে রাস্তাঘাট সরু। প্রচুর ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। উত্তরে রাস্তাঘাট বেশি প্রশস্ত। তাই আমাদের প্রবিধানটি উত্তরের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন হবে।
প্রবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো অযান্ত্রিক যানবাহন চালাতে চাইলে তাকে অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স প্রথমত এক বছরের জন্য ইস্যু করা হবে এবং মেয়াদ শেষে নির্ধারিত ফি দিয়ে তা নবায়ন করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালক দিয়ে অযান্ত্রিক যানবাহন বা রিকশা চালাতে দেওয়া যাবে না। যদি কোনো মালিক ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা চালক দিয়ে রিকশা চালান তবে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে চালককে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। একই সঙ্গে জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করা হবে করপোরেশনের দেওয়া রিকশার নম্বরটি। একবার জব্দ করা হলে রিকশার লাইসেন্স নম্বরটিও বাতিল হয়ে যাবে
কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে না দেওয়া হলেও অযান্ত্রিক যানবাহন বা রিকশাচালকের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে নিবন্ধকের কাছে কয়েকটি বিষয়ে উপযুক্ত বিবেচিত হতে হবে।
চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে উপযুক্ত বলে সিটি করপোরেশনের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সনদ বা প্রত্যয়ন লাগবে। আবেদনকারীকে সিটি করপোরেশন ও এর আশপাশের প্রধান প্রধান সড়ক, স্থাপনা, অফিস আদালত, গুরুত্বপূর্ণ স্থান ইত্যাদির বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। আবেদনকারীকে সড়কপথে চলাচল করার সময় যেসব নিয়ম-কানুন, ট্রাফিক সংকেত অন্য চালকরা মেনে চলেন- তা জানতে ও বুঝতে হবে। রিকশাচালকের লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের কম এবং ৫০ বছরের বেশি হতে পারবে না।
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ট্রাফিক অঞ্চলভিত্তিক ভাড়ার তালিকা নির্ধারিত থাকবে। এ প্রবিধান অনুযায়ী কর্পোরেশন প্রতিটি অযান্ত্রিক যানবাহন বা রিকশার জন্য দূরত্ব অনুযায়ী একটি ভাড়ার তালিকা তৈরি করতে পারবে। মুদ্রিত ভাড়ার তালিকা জনবহুল এলাকায় দৃশ্যমান করে টাঙাতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে রিকশার মালিককে সংশ্লিষ্ট জোনের সব ভাড়ার তালিকাও সরবরাহ করতে হবে। জনগণের সুবিধার্থে কখনো চালককে লাইসেন্স দেখাতে বলা হলে লাইসেন্সের সঙ্গে ভাড়ার তালিকাটিও দেখাতে হবে।
নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি দাবি করা বা নির্ধারিত জোনে নির্দিষ্ট দূরত্বে যেতে অস্বীকৃতি জানালে রিকশাচালককে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে বলে প্রবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।