অক্টোবর ১৭, ২০২৩ ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের শেষ কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ভোটগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজগুলো কখন, কোন শাখা-অধিশাখা করবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত যত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং যেসব কাজ বাকি আছে, সেগুলো ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী নির্বাচন আয়োজনের বেশির ভাগ কার্যক্রম ৩১ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার এ কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা ও ভোটগ্রহণের তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। এটি নির্বাচন কমিশন সভায় চূড়ান্ত হবে। ইসির একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, এ কর্মপরিকল্পনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ করাতে ইসির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসারও পরিকল্পনা নেই। ইসি বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে তা নিরসন করা তাদের দায়িত্ব নয়। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনীতিকরা করবেন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করতে যা যা করার তার সবই করবে ইসি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ করাই তাদের লক্ষ্য। যদিও পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ হলে সেখানে বিএনপিসহ অনেক দলের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে আবারও একটি বিতর্কিত নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে দেশ। উল্লেখ্য, প্রতি নির্বাচনের আগেই এ ধরনের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে ইসি।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া ২০১৪ সালের নির্বাচন একতরফা ছিল। ওই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও তাও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। নির্বাচন কমিশনের গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে, এবারও একতরফা নির্বাচনের দিকে আগাচ্ছে তারা। যদিও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা ইসির দায়িত্ব। সুষ্ঠু ভোট না হলে কিংবা পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে দেশ সম্ভাব্য সহিংসতার দিকে এগোতে পারে। তিনি আরও বলেন, ইইউ এবং মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
অবশ্য নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণের সাংবিধানিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় যখন যে কাজ উল্লেখ রয়েছে, তখনই সে কাজ করা হচ্ছে। কর্মপরিকল্পনা থেকে আমরা পিছিয়ে নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাউন্টডাউন। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট ও নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফশিল ঘোষণার কথা জানিয়েছে। সে অনুযায়ী ইসি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে।
জানা গেছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২২ সালে সেপ্টেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে। ওই কর্মপরিকল্পনায় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ১৪টি চ্যালেঞ্জ এবং তা উত্তোরণে ১৯টি করণীয় নির্ধারণ করা হয়। যদিও এসবের বেশির ভাগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি ইসি। এবার ভোট আয়োজনে ২৪ ধরনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নে সব শাখা-অধিশাখাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-২০ অক্টোবরের মধ্যে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের অবকাঠামো সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের তালিকা অনুমোদনের জন্য মাঠপর্যায়ের অফিস থেকে ইসিতে পাঠানো, ২২ অক্টোবরের মধ্যে মনোয়ন ফরম মুদ্রণ, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে তা মাঠে পাঠানো, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ছবিসহ এবং ছবি ছাড়া উভয় ধরনের তালিকা ছাপা শেষ করা। নির্বাচনের ফলাফল নির্বাচন কমিশনের বাইরের দেওয়ালে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ডিসপ্লে স্থাপনের জন্য প্রস্তুতি নিতে আইসিটি অনুবিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন ভবনে ফলাফল প্রদর্শনে ডিজিটাল মনিটর কেনা বা ভাড়া করা হবে।
নির্বাচনি কাজের সুবিধার্থে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সব শূন্যপদ পূরণ করতে আগামী ২৭ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে ইসি। একই দিন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রাথমিক প্যানেল তৈরির নীতিমালা কমিশনে তোলা হবে। ওই নীতিমালা অনুমোদন হলে ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল তৈরির জন্য বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এবারের নির্বাচনে ৯ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে।
এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ প্রস্তাব তৈরি ও সে আলোকে সভা আয়োজন করবে ইসি। আগামী ১৬-৩১ অক্টোবরের মধ্যে সেই প্রস্তাব কমিশনে উপস্থাপন করতে নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাবে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও নিষেধাজ্ঞা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনসহ সার্বিক পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে। বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে রাজনৈতিক দলের প্রচারণা প্রচারের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে ইসি। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা এবং দলীয় প্রধানের বক্তৃতা সম্প্রচারের নীতিমালা জারি করবে কমিশন। একইভাবে বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল প্রচারে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া প্রতিনিধির সঙ্গে সভা করবে ইসি। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এ সভা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, নির্বাচন আয়োজনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে গত বছরের ১৩ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। আরপিও এবং নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় সংশোধনী এনেছে। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্রের প্রাথমিক তালিকা তৈরি এবং নির্বাচনি সরঞ্জাম-গানিব্যাগ, স্ট্যাম্প প্যাড, অমোচনীয় কালিসহ ১০টি দ্রব্যাদি কেনার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে।