সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪ ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ
দীর্ঘ ১৭ বছর পর মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ পেয়েছে বিএনপি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে চায় শীর্ষ নেতৃত্ব। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দেড় মাস পর এবার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ফিরছে দলটি।
এ লক্ষ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দফায় যেসব কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিগত আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তা, সাংগঠনিক অদক্ষতা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেয়েছে সেসব কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে তিনটি জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, গাজীপুর মহানগরসহ আরও কয়েকটি কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে তিন বা ছয় মাস মেয়াদের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে। তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অধীনস্থ ইউনিট কমিটি গঠন করে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলার নতুন কমিটি করবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে সারা দেশে জেলাভিত্তিক দিকনির্দেশনামূলক যৌথ কর্মী সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে বিভাগভিত্তিক টিমও গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মী সভা শুরু হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ মাগুরা, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। সেই কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অধীনস্থ সব ইউনিটের কমিটি গঠন করবে। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলার নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হবে।
সূত্রমতে, এখনই ঢালাওভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও মহানগরের কমিটি ভেঙে দিতে চায় না বিএনপি। কারণ হিসাবে নেতারা জানান, বিগত আন্দোলনে অনেক জেলা বা মহানগর নেতারা রাজপথে ব্যাপক সক্রিয় ছিল। জেল খেটেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখনই তাদের কমিটি ভেঙে দিলে তৃণমূলে ভুল বার্তা যাবে। এজন্য যেসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিগত দিনে রাজপথে তেমন ভূমিকা ছিল না, অধীনস্থ ইউনিটের কমিটি গঠন করতে পারেনি, ৫ আগস্টের পর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে, সেসব কমিটি দ্রুতই ভেঙে দেওয়া হবে। পরে পর্যায়ক্রমে সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের এপ্রিলে বরগুনা জেলা বিএনপি কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে এ জেলা কমিটিবিহীন চলছে। শিগগিরই বরগুনা জেলার কমিটি দেওয়া হবে। এছাড়া বিলুপ্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, গাজীপুর মহানগরসহ আরও কয়েকটি জেলার কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে। বিএনপির একজন সহসাংগঠনিক সম্পাদক জানান, কোন জেলা বা মহানগরের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন, তার সার্বিক একটি চিত্র দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে রাজনীতি করে আসছে বিএনপি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশ কমিটি ঢাকা থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে যেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে, তার অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। আবার যেসব আহ্বায়ক কমিটি আছে; তার মেয়াদ তিন অথবা ছয় মাস দেওয়া হলেও বছরের পর বছর পার করছে।
দলটির নেতারা বলেন, সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমল ছিল বিএনপির জন্য ‘ভয়ংকর’ সময়। বিএনপিকে ভাঙতে এবং জিয়া পরিবারমুক্ত নেতৃত্ব গড়তে গত ১৭ বছর দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হলেও তা সফল হয়নি। তবে এজন্য মারাত্মক মূল্য দিতে হয়েছে নেতাকর্মীদের। প্রাণহানিসহ নানা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা যে মাঠে বিজয়ী হয়েছেন, কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ১৭ বছর ধরে সেই মাঠ তৈরি করেছেন আমাদের নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। তাদের নেতৃত্বেই গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী রাজপথে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে বহু নেতাকর্মী শহিদ হয়েছেন, অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছেন। এখন আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতে কাজ করছি।
সূত্র জানায়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল ও শ্রমিক দলের কমিটিও ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে। জাসাসের নতুন কমিটিও যে কোনো সময় ঘোষণা দেওয়া হবে।
সারা দেশে যৌথ কর্মী সভা শুরু করছে যুব, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদল; টিম গঠন : এদিকে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে সারা দেশে জেলাভিত্তিক দিকনির্দেশনামূলক যৌথ কর্মী সভার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য বিভাগভিত্তিক টিম গঠন করা হয়েছে। বরিশাল, খুলনা ও ফরিদপুর বিভাগীয় টিমে রয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান।
সিলেট, কুমিল্লা ও রাজশাহী বিভাগীয় টিমে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম পল। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগীয় টিমে রয়েছেন-স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী বা সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াসীন আলী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, স্বাধীনতার মূল চেতনা-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের নতুন পথযাত্রায় দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনায় এই যৌথ কর্মী সভা শুরু হচ্ছে।
২৮ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মী সভা শুরু হবে, কর্মী সভা প্রতিটি জেলায় হবে। এর মূল উদ্দেশ্য পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কর্মীদের নতুন ধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও উদ্বুদ্ধ করা। এতদিন একটা আন্দোলনের মধ্যে ছিলাম, জেল-জুলুম, হামলা-মামলার মধ্যে ছিলাম। এখন যে একটা নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এই জায়গায় রাজনৈতিক কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী-এটা সম্পর্কে একটা হোমওয়ার্ক বা অফিসিয়াল গাইডলাইন থাকা দরকার। আমরা সেই দিকনির্দেশনা দেব।