ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় শুক্রবার ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ। এই ট্রেন দুর্ঘটনাটি দেশটির ইতিহাসে ঘটা সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনাগুলোর একটি।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতে প্রতিদিন ১২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ রেলপথে যাতায়াত করে। রেল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ সত্ত্বেও ভারতে প্রতি বছর রেলপথে কয়েকশো দুর্ঘটনা ঘটে। আর এসব দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানবিক ত্রুটি বা পুরোনো সিগনালিং কিংবা সরঞ্জামকে দায়ী করা হয়।
শুধু ভারতেই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রেনে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। লাইনচ্যুত হয়ে বা মুখোমুখি সংঘর্ষে এ ধরনের দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে ভারতে। দেশটিতে একটি দুর্ঘটনায় ৮ শতাধিক যাত্রী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।
তেমন কিছু ভয়াবহ দুর্ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
গ্রীস, ফেব্রুয়ারি ২০২৩ – গ্রীসের রাজধানী এথেন্স এবং থেসালোনিকির মধ্যবর্তী রুটে একটি মালবাহী ট্রেন এবং একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫৭ জন নিহত হয়েছিল। যা দেশটিতে ঘটে যাওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা।
কঙ্গো, মার্চ ২০২২ – ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর লুয়ালাবা প্রদেশে পণ্য বোঝাই একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭৫ জন নিহত এবং ১২৫ জন আহত হয়েছিল। এক মাস পর একই এলাকায় একটি পণ্যবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হলে অন্তত আটজন মারা যান।
পাকিস্তান, জুন ২০২১ – পাকিস্তানের দক্ষিণ সিন্ধু প্রদেশে কৃষিজমির মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি ট্রেন লাইনচ্যুত এবং অন্য একটি যাত্রী পরিষেবার সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬৩ জন মারা গিয়েছিল।
তাইওয়ান, এপ্রিল ২০২১ – তাইওয়ানে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের একটি ট্রাকের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪৯ জন নিহত এবং ২০০ জন আহত হয়। গত কয়েক দশকের মধ্যে দ্বীপ দেশটির সবচেয়ে মারাত্মক রেল বিপর্যয়।
পাকিস্তান, অক্টোবর ২০১৯ – পাকিস্তানের লাহোরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী অতিরিক্ত যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে আগুন লেগে কমপক্ষে ৭৪ জন মারা যায় এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়।
ইতালি, ২০১৬ – ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে দুটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন। ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ওই দুর্ঘটনায় তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। পুগলিয়া অঞ্চলের কোরাটো এবং আন্দ্রিয়া দুই ছোট শহরকে সংযোগকারী একই লাইনে ট্রেন দুটি চলার ফলে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ক্যামেরুন, অক্টোবর ২০১৬ – ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউন্ডে থেকে ডুয়ালার অর্থনৈতিক কেন্দ্রে যাওয়ার পথে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে কমপক্ষে ৭৯ জন নিহত এবং প্রায় ৫৫০ জন আহত হয়েছিল। দুর্ঘটনার আগে ট্রেনটি অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত গতিতে চলছিল বলে তদন্ত শেষে জানা যায়।
কঙ্গো, এপ্রিল ২০১৪ – কঙ্গোর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের দক্ষিণে একটি জলাবদ্ধ এবং দুর্গম অংশে শত শত অবৈধ যাত্রী বহনকারী একটি পণ্যবাহী ট্রেন রেলপথ থেকে ছিটকে গিয়ে কমপক্ষে ১৩৬ জন নিহত হয়েছিল।
স্পেন, ২০১৩ – উত্তর-পশ্চিম স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গালিসিয়ায় ২০১৩ সালে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়। আহত হন ১৪০ জনেরও বেশি।
ভারত, জুন ১৯৮১ – প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অতিরিক্ত যাত্রীবাহী একটি ট্রেন বিহারের সহরসার কাছে সেতু পারাপারের সময় লাইনচ্যুত হয়ে বাগমতী নদীতে পড়ে গিয়েছিল ট্রেনটি। এতে প্রায় ৮০০ জনের মৃত্যু হয় ওই দুর্ঘটনায়। তবে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ২৩৫ বলা হয়েছিল। এছাড়া আগস্ট ১৯৯৫: উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের কাছে দিল্লিগামী পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল কালিন্দী এক্সপ্রেসের। কমপক্ষে ৩৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গরুর সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর ব্রেক ফেল করেছিল কালিন্দী এক্সপ্রেসের। ওই রেলপথেই আসছিল পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস। তার জেরেই সংঘর্ষ ঘটে।