বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্লে-অফ রাউন্ডের সেমি ফাইনালে হেরে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি। এখনও বিশ্বকাপ অনিশ্চিত ইতালির আগে ২০১৬ সালের ইউরোতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া পর্তুগালেরও। এছাড়া বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাদ পড়ার শঙ্কায় আছে সাবেক কোপা চ্যাম্পিয়ন চিলি, হামেস রদ্রিগেজের কলম্বিয়ার মত দলগুলি। আবার রিয়াল মাদ্রিদে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া গ্যারেথ বেলের সামনে সম্ভাবনা জেগেছে ওয়েলসকে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার। আবার আবার ২৬ বছর পর হয়তো বিশ্বকাপে জায়গা করে নিচ্ছে কানাডা। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের সর্বশেষ অবস্থা জেনে নেওয়া যাক।
ইউরোপিয়ান অঞ্চল: ইউরোপ থেকে সরাসরি ১৩ টি দল বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়। এর মধ্যে ১০ টি দল কাতারের বিমানে নিজেদের সিট এরই মধ্যে বুকিং দিয়ে ফেলেছে। বাকি তিনটি জায়গার জন্য লড়ছে ১২ টি দল। ইউরোপিয়ান বাছাই পর্ব বরাবরই কঠিন হয়ে থাকে। একটু পা হড়কালেই বিশাল খেসারত দিতে হয়। নিজেদের গ্রুপে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিসের খেসারত দিতে হয়েছে ইতালিকে প্লে অফের সেমিফাইনাল খেলতে নেমে। পুঁচকে উত্তর মেসিডোনিয়ার কাছে হেরে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের টিকেট কাটতে ব্যর্থ কিয়েলিনি-বনুচ্চির ইতালি।
ইউরোপিয়ান প্লে অফে ১২ টি দলকে ৪ গ্রুপে ভাগ করে সেমিফাইনাল রাউন্ড তৈরি করা হয়েছিল। সেমিফাইনালের বিজয়ী চার দল সূচি অনুযায়ী দুই গ্রুপে অপর দলের সঙ্গে খেলবে প্লে-অফ। সেখানে বিজয়ী দল পাবে বিশ্বকাপের টিকিট। যেখানে গতকাল রোনালদোর পর্তুগাল ফাইনালে উঠেছে তুরস্ককে হারিয়ে।
জয়ী পর্তুগালের ফাইনাল খেলার কথা ছিল ইতালি-মেসিডোনিয়ার মধ্যকার ম্যাচে জয়ী দলের সঙ্গে। সে হিসেবে বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের জম্পেশ লড়াইয়ের আশা করছিল সবাই। কিন্তু মেসিডোনিয়ার বিপক্ষে ইতালি হেরে যাওয়ায় হয়তো লাভটা পর্তুগালেরই হল। আগামী ২৯ মার্চ পরিষ্কার হয়ে যাবে রোনালদোকে বিশ্বকাপে দেখা যাবে কিনা।
ইউরোপিয়ান অঞ্চলের ম্যাচে জয় পেয়েছে গ্যারেথ বেলের ওয়েলস। জোড়া গোলে অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে ওয়েলসকে রেখেছেন ইতিহাস গড়ার পথে। প্লে-অফ ফাইনালে ইউক্রেন-স্কটল্যান্ড ম্যাচের বিজয়ীর সঙ্গে জয় পেলেই ওয়েলস চলে যাবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। তবে ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি সে ম্যাচকে পিছিয়ে দিয়েছে জুন পর্যন্ত।
আরেক গ্রুপে পোল্যান্ড হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সুবিধাভোগী। রাশিয়াকে ফিফা বহিষ্কার করায় লেভানদোভস্কির দল ম্যাচ না খেলেই উঠে গেছে ফাইনালে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ সুইডেন। চেক প্রজাতন্ত্রকে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের আশা জিইয়ে রেখেছে ইব্রাহিমোভিচের দল। এই গ্রুপের প্লে-অফ ফাইনালের তারিখও ২৯ মার্চ।
বিশ্বকাপে ইউরোপের বাকি ১০ দল: ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্পেন, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড।
দক্ষিণ আমেরিকা (কনমেবল): দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সরাসরি চার দল বিশ্বকাপে সুযোগ পায়। পঞ্চম দলকে খেলতে হয় এশিয়া অঞ্চলের সেরা তৃতীয় দলের সঙ্গে প্লে-অফ। এই অঞ্চল থেকে যথারীতি বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছে দুই ফেভারিট ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। গতকালের ম্যাচ শেষে বাকি দুই দল হিসেবে কারা পাচ্ছে কাতারের টিকেট তাও নিশ্চিত হয়ে গেছে। উরুগুয়ের বিপক্ষে পেরুর হার ও ব্রাজিলের কাছে চিলির বড় ব্যবধানে পরাজয় উরুগুয়ে ও ইকুয়েডরকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বকাপের মঞ্চে। তবে দু দলের মধ্যে কে হবে তৃতীয় আর কে চতুর্থ তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
পঞ্চম হয়ে প্লে অফে খেলার দৌড়ে টিকে আছে তিনটি দেশ। পেরু ২১ পয়েন্ট নিয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে। হামেস রদ্রিগেজের দল কলম্বিয়া ২০ পয়েন্ট নিয়ে ভালোভাবেই লড়াইয়ে টিকে আছে। ১৯ পয়েন্ট পাওয়া চিলিকেও ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না এখনোই। পেরু-প্যারাগুয়ে, কলম্বিয়া-ভেনেজুয়েলা ও চিলি-ইকুয়েদর ম্যাচ শেষেই জানা যাবে প্লে-অফে যাচ্ছে কোন দল।
বিশ্বকাপ নিশ্চিত: ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, ইকুয়েডর।
৫ম দলের লড়াই: পেরু (২১ পয়েন্ট), কলম্বিয়া (২০) ও চিলি (১৯)
এশিয়া: এশিয়া থেকে কাতার স্বাগতিক দেশ হিসেবে সবার আগে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে। বাকি চারটি জায়গার জন্য দুই গ্রুপে লড়াই শেষে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও সৌদি আরবের বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে গেছে। এখন নিজেদের গ্রুপে সেরা তিন নম্বর দলের জন্য লড়ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (৯ পয়েন্ট), ইরাক (৮) ও লেবানন (৬)।
অপর গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় স্থান নিশ্চিত করেছে গতকালই।
সংযুক্ত আরব আমিরাত এগিয়ে থাকলেও পরবর্তী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষই সবচেয়ে কঠিন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে তাদের জয়ের আশাটাই দুরাশা। তার চেয়ে সিরিয়াকে হারানোটা ইরাকের জন্য বেশ সহজতর। লেবাননকে লড়তে হবে ইরানের বিপক্ষে।
এশিয়া অঞ্চলের দুই গ্রুপের সেরা দুই তৃতীয় দলের মধ্যকার লড়াইয়ে জয়ী দলের সঙ্গে লড়াই হবে দক্ষিণ আমেরিকার পঞ্চম দলের।
বিশ্বকাপ নিশ্চিত: কাতার, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, সৌদি আরব।
তৃতীয় স্থান: অস্ট্রেলিয়া
তৃতীয় স্থানের লড়াই: সংযুক্ত আরব আমিরাত (৯ পয়েন্ট), ইরাক (৮) ও লেবানন (৬)।
আফ্রিকা: আফ্রিকা মহাদেশ থেকে এখনও কেউই পারে নি বিশ্বকাপে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করতে। আফ্রিকা থেকে ৫টি দল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। এ লড়াইয়ে ১০ টি এখন নিজেদের মধ্যে দুই লেগের প্লে-অফ খেলছে। যেখানে বড় আকর্ষণ লিভারপুলের দুই মহাতারকা মোহামেদ সালাহ ও সাদিও মানের দলের পরস্পরের মুখোমুখি হওয়া। যার মানে দাঁড়াচ্ছে, দুজনের যেকোন একজন বিশ্বকাপে থাকছেন না।
আফ্রিকান প্লে অফ:
মিশর বনাম সেনেগাল
ক্যামেরুন বনাম আলজেরিয়া
ঘানা বনাম নাইজেরিয়া
ডিআর কঙ্গো বনাম মরোক্কো
মালি বনাম তিউনেশিয়া;
কনক্যাকাফ অঞ্চল: কাগজে কলমে কানাডার বিশ্বকাপ যাওয়া আটকে থাকলেও, তারা যে বিশ্বকাপ যাচ্ছে তা মোটামুটি নিশ্চিত। বাকিদের মধ্যে লড়াইয়ে টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কোস্টারিকা ও পানামা। এই গ্রুপ থেকে সরাসরি ৩টি দল বিশ্বকাপে সুযোগ পাবে। কনক্যাকাফ অঞ্চলের চতুর্থ দল প্লে-অফ খেলবে অশেনিয়া অঞ্চলের প্রথম হওয়া দলের বিপক্ষে। তাদের মধ্যকার বিজয়ী দল যাবে বিশ্বকাপে।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও চতুর্থ হওয়ার লড়াই: কানাডা (২৫ পয়েন্ট), যুক্তরাষ্ট্র (২২), মেক্সিকো (২২), কোস্টারিকা (১৯) ও পানামা (১৮)।
ওশেনিয়া অঞ্চল: ওশেনিয়া অঞ্চলের প্রথম হওয়া দলকে প্লে-অফ খেলতে হয় কনক্যাকাফ অঞ্চলের চতুর্থ হওয়া দলের বিপক্ষে। এই অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে ফেভারিট নিউজিল্যান্ড। আগামী ২৭ মার্চ নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালে মাঠে তাহিতির বিপক্ষে। অন্যদিকে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ লড়বে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। বিজয়ী দুদলের মধ্যকার ফাইনালে বিজয়ী দল আন্তঃ মহাদেশীয় প্লে-অফ খেলবে কনক্যাকাফ অঞ্চলের দলের সঙ্গে।