বিপিএলের ১১ আসরে ৩০ নামে ৮ দল

বিপিএলের ১১ আসরে ৩০ নামে ৮ দল

খেলা

ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪ ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

‘উপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’- দেশের সর্বত্র প্রচলিত একটি প্রবাদ। প্রবাদটি দিয়ে সাধারণভাবে বাহ্যিক চাকচিক্যময়তা আর ভেতরের অগোছালো, অব্যবস্থাপনা বা অনিয়মকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে যেন এটি চিরন্তন ও অপ্রিয় সত্য।

ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টটি অতিক্রম করেছে ১৩ বছর। আগামী ৩০ ডিসেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে বিপিএলের একাদশ আসর। জনপ্রিয় এই টুর্নামেন্টের নিত্যসঙ্গী বিতর্ক। আর্থিক নীতিমালা না থাকায় দলগুলোর ভেতর থাকছে না ভারসাম্য। যার ফলে এক যুগেরও বেশি পেড়িয়ে এসেও ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টুর্নামেন্টের থাকছে না স্থিতিশীলতা ও প্রত্যাশিত গ্রহণযোগ্যতা।

বিশ্বের সকল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দীর্ঘ মেয়াদে মালিকানা দেওয়া হলেও একেবারে ব্যতিক্রম বিপিএল। দলগুলোর নাম ও মালিকানা পরিবর্তনের পরিবর্তন যেন কেবল মিউজিক্যাল চেয়ারের সঙ্গেই তুলনীয়।

নাম বদলের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা। এবারের আসরেও দলটি নতুন নামে আবির্ভূত হচ্ছে। ঢাকার নামে সর্বাধিক ৭ বার এসেছে বদল। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিলেট ভিন্ন ভিন্ন ৬ মালিকানায় খেলেছে। তাদের নামে পরিবর্তন এসেছে ছয়বার। এছাড়া রাজশাহীর চারবার নাম পরিবর্তন করেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের তিনবার করে পাল্টেছে মালিকানা ও নাম। কুমিল্লা ও রংপুরের দুইবার করে এসেছে নামের পরিবর্তন। অন্যদিকে আসন্ন আসরেও হতে চলেছে নতুন নাম ও মালিকানায় দুই দলের আত্মপ্রকাশ।

খেলোয়াড়দের পাওনা বকেয়া, ম্যাচ পাতানোর কেলেঙ্কারি, নানান অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনায় বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছে বিপিএল। ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্যবসায়িক তত্ত্ব অনুপস্থিত। অনেকের না বুঝেই বিপিএলে দল চালানোর অতীত ইতিহাস রয়েছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও কোনো দলের নেপথ্যে ছিল।

দশটি আসর পেরিয়ে গেলেও আর্থিক মডেল যেমন দাঁড়ায়নি। খেলোয়াড় তৈরির সংস্কৃতিও অনুপস্থিত। বেশিরভাগ দলেরই নিজস্ব অবকাঠামো নেই। টুর্নামেন্টের মাস দেড়েক সময়ের বাইরে থাকেনা কার্যক্রম। প্রতিভা অন্বেষণের উদ্যোগ না থাকাটা বেশ হতাশাজনক।

টুর্নামেন্টে বারবার চলেছে ভাঙা-গড়ার খেলা, খেলোয়াড়দেরও ঠিকানা বদলেছে বারবার। ২০১২ সালে শুরু হয় বিপিএল। পরের বছর আসরটির দ্বিতীয় আসর বসলেও ২০১৪ সালে তা মাঠে গড়ায়নি। পেশাদারিত্বের ছাপে রয়েছে অভাব। ড্রাফটের বাইরে খেলোয়াড়দের সরাসরি চুক্তির ব্যবস্থা রাখা অনেকটা মাছের বাজারে দামাদামির মতোই।

বিপিএলের পরে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) চালু হলেও এখন তা অনেকটাই জমজমাট। নিরাপত্তা ঝুঁকি কমে আসা ও বিশ্বের অন্যান্য জাতীয় দলগুলোও পাকিস্তান সফরে যেতে শুরু করায় কেটে গেছে ক্রিকেটার সংকট। সম্প্রচার মান, খেলার মান এবং রাজস্ব আয় সবই আইপিএলের পরেই (পিএসএল) অবস্থান।

আরব আমিরাতে আইএল টি-২০ দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ ২০, এই লিগগুলোতেও ডাক পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। অবধারিতভাবেই শীর্ষ কিংবা মাঝারি মানের ক্রিকেটারদের পছন্দের অগ্রাধিকারে নেই বিপিএল। অন্যদিকে একই সময়ে একাধিক লিগ চলার কারণে বাংলাদেশে আসতে নামিদামি ক্রিকেটাররা আগ্রহ দেখান না।

অখ্যাত লঙ্কান ও আফগান ক্রিকেটারদের সঙ্গে জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটারদেরই বেশি দেখা যায়। বেহাল দশার কারণে বৈশ্বিক দর্শককূলেও টুর্নামেন্টটি খুব একটা দেখার আগ্রহ নেই।

ব্যবস্থাপনার অভাবে বিপিএল কোনো ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারেনি। বিদেশি ক্রিকেটারদের কাছেও হয়ে উঠতে পারেনি আকর্ষণীয় আসর। দলগুলোর গড়ে ওঠেনি কোনো পরিচিতি ও মার্কেট ভ্যালু, হয়নি কোনো সমর্থক গোষ্ঠী।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার বদলের পর বিপিএলের আসন্ন আসর নিয়ে অনেকেই আশাবাদী। তিন ভেন্যু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে আমেজ আনতে বিসিবির আয়োজনে রাখা হয়েছে মিউজিক ফেস্টের ব্যবস্থা। অফিসিয়াল থিম সংয়ের হয়েছে প্রকাশ। থিমটি মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেয়, যা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে হয়েছিল। এটি পরিবর্তনশীল বাংলাদেশকেও প্রকাশ করে।

বিপিএলের ১১ আসরে দলগুলোর নাম বদলের তালিকা- 

ঢাকা: ঢাকা গ্লাডিয়েটরস, ঢাকা ডায়নামাইটস, ঢাকা প্লাটুন, মিনিস্টার ঢাকা, ঢাকা ডমিনেটরস, দুরন্ত ঢাকা, ঢাকা ক্যাপিটালস।

সিলেট: সিলেট র‌য়্যালস, সিলেট সুপার স্টারস, সিলেট সিক্সার্স, সিলেট থান্ডার, সিলেট সানরাইজার্স, সিলেট স্ট্রাইকার্স।

বরিশাল: বরিশাল বার্নার্স, বরিশাল বুলস, ফরচুন বরিশাল।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কিংস, চট্টগ্রাম ভাইকিংস, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

খুলনা: খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস, খুলনা টাইটানস, খুলনা টাইগার্স।

রাজশাহী: দুরন্ত রাজশাহী, রাজশাহী কিংস, রাজশাহী রয়্যালস, দুর্বার রাজশাহী।

কুমিল্লা: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স।

রংপুর: রংপুর রাইডার্স, রংপুর রেঞ্জার্স।