নভেম্বর ৩০, ২০২৪ ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ
বদনজর হলো কুদৃষ্টি, খারাপ দৃষ্টি, অশুভ দৃষ্টি, খারাপভাবে তাকানো। আমাদের মধ্যে কেউ ভালো বা খারাপভাবে দৃষ্টি দেয়। উঁচু স্থান থেকে নিচু স্থানে নামিয়ে দেয় বদ নজর। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বদনজর সত্য।
বদনজর মানুষকে উঁচু স্থান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ)
মুআত্তা ইমাম মালেকে বদ নজরের ব্যাপারে সাহাবি আবু সাহল ইবনে হুনাইফের একটি ঘটনা রয়েছে। তিনি গোসল করার জন্য শরীরের জামা খুলে ফেললে সুঠাম দেহ দেখতে পান আমের ইবনে রবিআ।
তার শরীর দেখে মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে, ‘আমি আজ পর্যন্ত এমন সুন্দর ও কান্তিময় দেহ কারও দেখিনি। ’ অতঃপর সাহল ইবনে হুনাইফের ভীষণ জ্বর হয়। রাসুল (সা.) এ সংবাদ পেয়ে আমের ইবনে রবিআকে নির্দেশ দেন, সে যেন অজু করে সেই পানি থেকে কিছু অংশ পাত্রে রাখে। পরে তা যেন সাহল ইবনে হুনাইফের দেহে ঢেলে দেয়।
নির্দেশ পেয়ে সেই মোতাবেক কাজ করলে সাহল ইবনে হুনাইফ অসুস্থতা থেকে রক্ষা পেলেন। অতঃপর রাসুল (সা.) আমের ইবনে রবিআকে সতর্ক করে বলেন, ‘তোমাদের কেউ নিজের ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? যখন তোমার দৃষ্টি তার দেহ সুন্দর দেখেছিল তখন তুমি তার জন্য বরকতের দোয়া করলে না কেন? মনে রেখ, বদনজর লেগে যাওয়া সত্য।’
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘কাফেররা যখন উপদেশ বাণী শোনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে, আর তারা বলে, এ তো এক পাগল। ’ সুরা কলম, আয়াত : ৫১।
আয়াতের তাফসিরে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে’, ‘তোমার প্রতি বদ নজর দেবে।
’অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে রোগী বানিয়ে দেবে, যদি আল্লাহর তোমার প্রতি হেফাজত না থাকেন। সুতরাং আয়াতটি প্রমাণ বহন করে যে, বদনজরের কুপ্রভাবের বাস্তবতা রয়েছে, আল্লাহর হুকুমে।
বদনজর ভালো জিনিসের প্রতি লাগলে ক্ষতি হয়। এজন্য কারও সৌন্দর্য, সম্পত্তি বা কোনো প্রকার উন্নতি দেখলে তার জন্য উন্নতি ও মঙ্গলের দোয়া করা প্রয়োজন।
বলা উচিত, ‘বারাকাল্লাহু ফিহি’ আল্লাহতায়ালা এতে বরকত দান করুন ‘মাশাআল্লাহ’ বা লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। এ ছাড়া বদনজর থেকে রক্ষা পেতে কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস এবং নিয়মিত আমল করলে বদনজর থেকে রক্ষা এবং আক্রান্ত হলে সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। শিশুরাও বদনজরে আক্রান্ত হতে পারে।
বদনজর থেকে রক্ষা পেতে রাসুলুল্লাহ ছোটদের কোলে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন বলে উল্লেখ আছে। তিনি হজরত হাসান ও হুসাইনকে (রা.) নিম্ন উল্লিখিত দোয়াটি পাঠ করে ফুঁ দিতেন।
দোয়াটি হলো- ‘উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।’
অর্থাৎ আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই, সব ধরনের শয়তান থেকে, কষ্টদায়ক বস্তু থেকে এবং সব ধরনের বদনজর হতে। বুখারি।
লেখক: গবেষক, আল ফুরকান রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা