সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের শপথ গ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। শপথ নেওয়ার জন্য চিত্রনায়ক জায়েদ খান ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। পরে অবশ্য এ অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন জায়েদ খান।
সোমবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় এফডিসি বাগানে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিল্পী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘জায়েদ খান আমাকে ধোকা দিয়েছে। আমি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও জানান, ‘জায়েদ খান যে কাগজ দেখিয়ে শপথ নিয়েছেন তা আদালতের সার্টিফাই কপি না। শপথ নেওয়ার জন্য জায়েদ খান শিল্পী সমিতির সভাপতিকে, সমিতিকে ধোকায় ফেলেছে। তাই তার শপথটি থাকছে না।’
পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জায়েদ খান বলেন, প্রতারণা কে করে? যার কোনো রেজাল্ট নেই, সে প্রতারণা করে! যে মামলায় জিতেছে, হাইকোর্টের পুরো রায় যেখানে, সেখানে প্রতারণার দরকার আছে কি?
অভিনেতা বলেন, কাঞ্চন ভাইয়ের কোথাও হয়ত বুঝার ভুল আছে। তিনি হয়ত বিষয়টা বুঝতে পারেননি। বিষয়টা হচ্ছে, আমি মামলায় হাইকোর্টে জিতেছি, এটা নিশ্চিত। এটা পূর্ণাঙ্গ রায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি একটি লয়ার সার্টিফিকেট নিয়েছি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনযায়ী, সার্টিফাই কপিটা যতদিন না উঠে, ততদিন লয়ার সার্টিফিকেটটা ল অর্ডার হিসেবে গণ্য হবে। আমি সেটা সঙ্গে সঙ্গে এনে জমা দিয়েছিলাম। তখন কাঞ্চন ভাই হেসে বললেন, শুক্রবার মিটিং আছে। সেখানে হাজির থেকো। এ ছাড়া তিনি অন্য কিছু বলেননি।
জায়েদ খান বলেন, পরদিন কাঞ্চন ভাইন বললেন, আমার কিন্তু একটা সার্টিফাই কপি লাগবে। তখন আমি বলেছিলাম, লয়ার সার্টিফিকিটই তো যথেষ্ঠ। তবে আমি তো আইনকানুন বুঝিও কম। তবুও পরে আমার আইনজীবীকে বিষয়টি বলার পর তিনি আমাকে একটি অনলাইন কপি দিয়েছেন। এটাই মামলার প্রধান সার্টিফাই কপি। এটাই ইস্যু হয়, যেটা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। পরে আমি এটি নিয়ে শুক্রবার কাঞ্চন ভাইকে দেখালাম। তিনি সন্তুষ্ঠ হয়ে সব কাজ করলেন। এটাই প্রধান ঘটনা। এর মধ্যে কী প্রতারণা করলাম, কী জালিয়াতি করলাম, জানি না! আমি তো লয়ার সার্টিকিটটা আগেই দিয়ে দিয়েছি। এটার পর তো আর কিছু দরকার হয় না।
এই চিত্রনায়ক বলেন, তারপরও যেহেতু কাঞ্চন ভাই বারবার বলছেন, তখন আমার আইনজীবীকে বললাম যে ভাইয়া একটা সিলমারা কপি চায়। তখন তিনি আমাকে জেনুইন কপিটাই দিয়েছেন। তবে এটার একটাই কপি ছিল। আর ফটো কপি করার জায়গা নেই। তাই এটা দিয়ে দিতে না করেছিলেন আমার আইনজীবী। কিন্তু কাঞ্চন ভাই তখন বলেননি যে এখান থেকে কোনো কপি তাকে দিতে হবে। পরে আমার আরেকটা ছেলেকে দিয়ে কপিটা পাঠিয়ে দিয়েছি। পরে কাঞ্চন ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, একটা কপি লাগবে। তখন আমি বলেছি, ভাইয়া আসছি। পরে গিয়ে বললাম, ভাইয়া ও তো কপিটা নিয়ে চলে গেছে। আমি রাতের বেলায় পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু শুক্রবার হওয়ার রাতে গিয়ে দেখি সব বন্ধ।
জায়েদ খান বলেন, এরপর শনি ও রোববার মামলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সোমবার সকালে কাঞ্চন ভাই আমাকে ফোন করেছেন। তখন আমি কোর্টে। তখন আমি বললাম, ভাইয়া ভুল হয়ে গেছে মনে হয়। আমি আসছি। আমার তো মনে কোনো দোষ নেই। জালিয়াতি এবং ভুয়া কাগজ সেটা হতো, যদি আমি কোর্টের সিল, স্বাক্ষর, বা অন্য কোনো মামলার কাগজ লাগিয়ে আমি মিথ্যাভাবে দিতাম, তখন বলা যেতে সেটা জালিয়াতি বা ভুয়া কাগজ। এটা আমি আমার মামলা সংক্রান্ত সার্টিফাই কপিটাই তার হাতে দিয়েছি। আমি যদি মামলা না-ই জিততাম, তবে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কীভাবে আপিল করলেন? সেটা বড় কথা না। বড় কথা হলো- আমি কোনো জালিয়াতি বা মিথ্যা মামলার কাগজ দেইনি। আমি আমার মামলারই কাগজ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার আইনজীবীও কাঞ্চন ভাইকে বলেছেন, জায়েদ ভাই কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু করেননি। তিনি তো বিজয়ীই। তিনি যা করেছেন, তো ঠিকই করেছেন। এখানে আপনাকে মিথ্যা বলার কিছু নেই। আপনি হয়ত কাগজটা পড়তে ভুল করেছেন বা বুঝতে ভুল করেছেন। দেখেন এটাই জায়েদ ভাইয়ের মামলা। এটা পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। অনলাইন অর্ডারটাও দেখেন। তখন অনলাইন অর্ডারটাও তার কাছে জমা দিয়ে এসেছি। আর লয়ার সার্টিফিকেট তো আছেই। তখন তো কাঞ্চন ভাই বিষয়টা বুঝেছেন। এটা নিয়ে যে তিনি আবার সংবাদ সম্মেলন করে এভাবে বলবেন, তা আমি ভাবিনি।