পেট্রা: পাহাড় কেটে বানানো আস্ত এক নগর

ফিচার স্পেশাল

আগস্ট ৩, ২০২২ ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ

হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছিল এক নগরী। নাম পেট্রা। আজ থেকে ছয় হাজার বছর আগে এই নগরীর গোড়া পত্তন হয়। পাহাড় কেটে তাতে কারুকাজ করে চোখ ধাঁধানো ভবন বা দূর্গ নির্মাণ করা হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব চারশত বছর ধরে এই দূর্গ ছিল নাবাতাইন সম্প্রদায়ের দখলে। বর্তমান জর্ডানে এর অবস্থান। পেট্রা নগরীর পশ্চিমে গাজা ও ফিলিস্তিন। উত্তরে বস্ত্রা ও দামাস্ক। দক্ষিণে আকাবা ও লোহিত সাগর। দূর্গ তৈরি এবং তাতে বসবাসের শুরু হয়েছে আরো চার হাজার বছর পূর্বে। পুরো পেট্রা নগরীতে শুধুমাত্র রাজবাড়িতে প্রবেশ নিষেধ। বাইরে থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

পারস্য উপসাগরে যাবার সব বাণিজ্যিক পথের কেন্দ্রভূমি ছিল এই পেট্রা

পারস্য উপসাগরে যাবার সব বাণিজ্যিক পথের কেন্দ্রভূমি ছিল এই পেট্রা

পারস্য উপসাগরে যাওয়ার সব বাণিজ্যিক পথের কেন্দ্রভূমি ছিল এই পেট্রা। যখন সমুদ্র পথ আবিষ্কার হয়নি, তখন এই পেট্রা নগরীতে হাতি, ঘোড়া ও গাঁধার পিঠে শাওয়ার হয়ে মানুষের চলাচল ছিল। রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাফেলার জংশন বা মিলনস্থল ছিল এই পেট্রা। নাবাতাইন সম্প্রদায়ের রাজা প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীবর্গ ও প্রশাসন পেট্রা থেকেই শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। রাজ্য রক্ষার দূর্গ হিসেবেও ব্যবহার হতো এই নগরীটি।

রোমানদের সময় সমুদ্র পথে বাণিজ্য শুরু হলে তারা পেট্রা দখল করে। ধীরে ধীরে পেট্রার অবনতি হতে থাকে। তাছাড়া ৩৬৩সালে প্রচণ্ড ভূমিকম্পের ফলে পেট্রা অনেকাংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। রোমানদের পূর্বে এই নগরীতে দুইজন পয়গম্বরের আগমণ ঘটেছিল। ১২ শতক দশকের কোনো এক সময় এটি মুসলিম শাসকের দখলে চলে আসে।

১২ শতক দশকের কোনো এক সময় এটি মুসলিম শাসকের দখলে চলে আসে

১২ শতক দশকের কোনো এক সময় এটি মুসলিম শাসকের দখলে চলে আসে

কালের বিবর্তনে মাটিচাপা পড়েছিল এই নগরী। জেরুজালেমের British School of Archaeology এর  পক্ষে ১৯৫৮ সাল থেকে পেট্রা (petra) নগরীতে খনন কাজ শুরু করে এবং পরবর্তীকালে আমেরিকান সেন্টার অফ ওরিয়েন্টাল রিসার্চ (American Center of Oriental Research) পেট্রার প্রত্নতত্ত্ব উদ্ধারে যুক্ত থেকে কাজ করে। ধ্বংসাবশেষ থেকে সাধারণত সিক নামে পরিচিত সরু ঘাট, যা পূর্ব থেকে আগত একটি রাস্তাকে নির্দেশ করা হয়, সেটা খুঁজে পাওয়া যায়। সিক থেকে প্রথম দেখা সাইটের মধ্যে, খাজনা (ট্রেজারি) উল্লেখযোগ্য, এবং এটি আসলে একটি বিশাল সমাধি। আল-ডেয়ার (মনাস্ট্রি) পেট্রার অন্যতম বিখ্যাত রক-কাট (পাথর কেটে তৈরি) স্মৃতিস্তম্ভ। প্রাচীন শহরের বিশাল জনগোষ্ঠীকে সার্বিক সহযোগিতার লক্ষে, এর বাসিন্দারা বাঁধ, জলাশয়, শিলা-খোদাই করা জলের চ্যানেল এবং সিরামিক পাইপ সহ একটি বিস্তৃত জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থা নির্মাণ করেছিল।

নগরীর অসম্পূর্ণ সমাধির সম্মুখভাগ বাইজেন্টাইন সময়ে গির্জা হিসাবে ব্যবহৃত হত। পেট্রার অনেক সমাধিতে অনেক বিস্তৃত মুখোমুখি জায়গা রয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া খননকার্যে আরো বেশ কয়েকটি মন্দির ও স্মৃতিসৌধ আবিষ্কৃত হয়েছে যা প্রাচীন শহরের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের বিষয়টিকে ব্যাপকভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল। বর্তমানে ধ্বংসাবশেষগুলি বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এবং এখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভীড়, স্মৃতিস্তম্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভীড়, স্মৃতিস্তম্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে

এখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভীড়, স্মৃতিস্তম্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে

১৯৮৫ সালে পেট্রা নগরীকে ইউনেস্কোর একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালে, স্যাটেলাইট চিত্র থেকে এবং ড্রোন ব্যবহার করে বিশালাকার একটি স্মৃতিসৌধের কাঠামো প্রত্নতাত্ত্বিকগণ আবিষ্কার করেছিলেন। ধারণা করা হয় যার সূচনাটি হয়েছিলো প্রায় ১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, যখন নবাতিয়ানরা তাদের জন সাধারনের জন্য ভবন নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছিল।

এটি নগরীর কেন্দ্রস্থল থেকে জাবাল আন-নিময়ের পাদদেশ এবং প্রায় শূন্য দশমিক পাঁচ মাইল দক্ষিণে শহরের প্রধান ক্ষেত্রের বাইরে অবস্থিত। তবে এটি শহরের দিকে নয়, পূর্ব দিকে মুখ করে অবস্থিত। কাঠামোটি একটি বিশাল, ১৮৪ বাই ১৬১ ফুট (৫৬ বাই ৪৯ মিটার) প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে গঠিত এবং এর পূর্ব দিকের সমস্ত অংশে একটি সত্যিকারের সিঁড়ি রয়েছে। বৃহৎ প্ল্যাটফর্মটি কিছুটা ছোট।

এর ভৌগলিক গুরুত্ব ইতিহাসে অন্যতম প্রভাব ফেলেছিল

এর ভৌগলিক গুরুত্ব ইতিহাসে অন্যতম প্রভাব ফেলেছিল

পেট্রার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এর ভৌগলিক গুরুত্বও ইতিহাসে অন্যতম প্রভাব ফেলেছিল। এই সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ২০০৭ সালে পেট্রাকে নতুনভাবে নির্বাচিত পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য এর একটি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। নিরাপত্তা কর্মীরা এখনো ঘোড়ার পিঠে শাওয়ার হয়ে টহল দিয়ে থাকেন। ঘোড়া চলার ছন্দ আর শব্দ সবমিলিয়ে পর্যটকদের আদিম যুগের আমেজ দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *