পুতিনকে কি কখনো গ্রেফতার করা যাবে?

পুতিনকে কি কখনো গ্রেফতার করা যাবে?

আন্তর্জাতিক

মার্চ ১৮, ২০২৩ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে শুক্রবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেক্সিয়েভনা লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।

পুতিন ও মারিয়া আলেক্সিয়েভনা লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে ইউক্রেন থেকে শিশুদের জোরপূর্বক নির্বাসিত করার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে আইসিসি।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও আদৌ কি রুশ প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করা যাবে? রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অবশ্য বলে দিয়েছেন, রাশিয়া আন্তর্জাতিক আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না। তারা এই প্রশ্নটি অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন।

পাশাপাশি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, আইসিসির আদেশ মানতে রাশিয়া বাধ্য না। কারণ আমরা এ আদালতকে মানি না।

তবে টাইমের প্রতিবেদন অনুসারে, ক্ষমতায় থাকাবস্থায় পুতিন গ্রেফতার হবেন, এমন সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ আইসিসির নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। তাই গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর ওপর নির্ভর করে আইসিসি।

১৯৯৮ সালে যে আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে আইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এতে এখন পর্যন্ত ১২৩ দেশ সই করলেও সেই রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি রাশিয়া।

আর নিকট-ভবিষ্যতে আইসিসির চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী কোনো দেশে পুতিনে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর গেলেও তিনি যে গ্রেফতার হবেন, তেমন কোনো আশঙ্কা নেই বললেই চলে। কারণ এর জন্য ওই দেশটিকে অবশ্যই পুতিনকে গ্রেফতারে আগ্রহী হতে হবে।

ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিনিধিত্বকারী লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কবেক কলেজের অধ্যাপক বিল বোরিং বলেন, আমি মনে করি না, পুতিনের ব্যক্তিগত পরিণতি ভোগ করার কোনো উপায় রয়েছে।

পরমাণু অস্ত্রের বিশাল মজুতসহ রাশিয়া এখনো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। তাদের শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা যে কোনো দেশের জন্য কঠিন পরিণতি ডেকে আনতে পারে, এটি সবাই খুব ভালো করেই জানে।

তা ছাড়া আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বহু নজির রয়েছে বিশ্বজুড়ে। দারফুর গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আইসিসি। কিন্তু এটি তার বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করতে পারেনি।

এমনকি পুতিন ও তার মিত্ররা রাশিয়ায় ক্ষমতা হারানোর পরেও তাকে যে প্রত্যর্পণ করা হবে, সেই সম্ভাবনাও কম। এটি করতে গেলে বড় বাধার সম্মুখীন হবে নতুন সরকার। কারণ রাশিয়ার আইনে রুশ নাগরিকদের অন্য রাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও পুতিনকে গ্রেফতার না করে তার বিচার করবে না। কারণ অভিযুক্ত উপস্থিত না থাকলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করে না আইসিসি।

তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে— যদি এই গ্রেফতার তামিল করায় না যায়, তা হলে এমন গ্রেফতারি পরোয়ানার কী দরকার। এটি আসলে আন্তর্জাতিকভাবে এবং রাশিয়ার মধ্যেই জনমতের ওপর পুতিনের বিরুদ্ধে প্রভাব ফেলার একটি কৌশল। পাশাপাশি পুতিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো পুতিনের বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *