ন্যাটোর সদস্য হওয়া যে অসম্ভব এটা মেনে নিতেই হবে: জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক স্লাইড

মার্চ ১৭, ২০২২ ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, অবশ্যই এটা মেনে নিতে হবে যে ‘উত্তর-আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট’ তথা ‘ন্যাটো’ জোটের সদস্য হওয়া তার দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। মঙ্গলবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চতুর্থ দফা আলোচনা শুরু হওয়ার সময় তিনি ওই মন্তব্য করেন।

ব্রিটেনের নেতৃত্বাধীন ইঙ্গ-ফরাসি ‘যৌথ অভিযাত্রী বাহিনীর’ সদস্য দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বৈঠকে ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটভুক্ত করার ব্যাপারে নিজের হতাশার কথা জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, বহু বছর ধরে শুনে আসছি যে ন্যাটোর দুয়ার খোলা, তবে একই সময়ে এটাও শুনেছি যে তাতে যুক্ত হতে পারব না। আর এটা এমন এক বাস্তবতা যে তা সবাইকে মেনে নিতে হবে।

জেলেনস্কি তার এই বিলম্বিত বোধোদয়ের কথা এমন সময় জানালেন যখন ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান বিশ দিন পেরিয়ে গেছে। রুশ অভিযানে ইউক্রেনের অবকাঠামো প্রায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ও বিপুল সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছে। অথচ ইউক্রেন ন্যাটো জোটে তার শরিক হওয়ার বিষয়টিকে বৈধ করতে সংবিধানেও পরিবর্তন এনেছে।

পাশ্চাত্যের সামরিক জোট ন্যাটো ২০০৮ সালে বুখারেস্ট বৈঠকে পূর্বাঞ্চলের দিকে এই জোটের বিস্তার ঘটানোর নীতির আলোকে ইউক্রেন ও জর্জিয়াকে ন্যাটোভুক্ত করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রুশ সীমান্তের খুব কাছে ন্যাটো জোটের এমন বিস্তারের প্রচেষ্টা সেই থেকেই রাশিয়া ও ন্যাটোর বিরোধের এক বড় কারণ হয়ে দেখা দেয়।

ইউক্রেনের পাশ্চাত্যপন্থী প্রেসিডেন্ট ইউশচেঙ্কোই প্রথম তার দেশকে ন্যাটোভুক্ত করার চেষ্টা চালান। কিন্তু রুশপন্থী ভিক্টর ইয়ানোকোভিচ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হলে এ প্রচেষ্টা স্থগিত হয়। এরপর ২০১৪ সালে আবারও পাশ্চাত্যপন্থী প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের ক্ষমতায় আসলে দেশটির ন্যাটোজোটভুক্তির বিষয় আবারও বেগবান হয় এবং এজন্য দেশটির সংবিধানেও বিশেষ ধারা যুক্ত হয়।

ইউক্রেনের নতুন সরকার বিষয়টিকে তাদের জন্য লাভজনক ও নিরাপদ মনে করলেও রাশিয়ার জন্য তা সেদেশের নিরাপত্তার লাল সীমানা লঙ্ঘনের শামিল। তাই রাশিয়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতেও বার বার ইউক্রেনের ন্যাটোজোটভুক্তির পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রধান উস্কানিদাতা ও উৎসাহদাতা মার্কিন সরকার এবং ন্যাটো জোট তা নাকচ করে দেয় যদিও খোদ ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলো কিয়েভকে তাদের সদস্য করার ব্যাপারে কখনও একমত ছিল না। বিশেষ করে ফ্রান্স ও জার্মানি ইউক্রেনকে ন্যাটোজোটভুক্ত করার প্রস্তাবকে কখনও ইতিবাচক চোখে দেখেনি।

ইউরোপীয় জোটের দুই শীর্ষস্থানীয় সদস্য ফ্রান্স ও জার্মানি মনে করত যে কিয়েভকে ন্যাটোভুক্ত করার প্রচেষ্টা অবশ্যই রাশিয়ার কড়া প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে। শেষ পর্যন্ত তাদের এই আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এখন ইউরোপের নিরাপত্তাও নড়বড়ে হয়ে উঠেছে।

ইউক্রেনে রুশ হামলা শিগগিরই শেষ হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মাইকেল হিরশ্‌-এর মত কেউ কেউ মনে করেন এটা স্পষ্ট যে পশ্চিমা শিবিরের প্রতি রুশ প্রেসিডেন্টের ক্ষোভ ও অবিশ্বাস অব্যাহত থাকবে এবং যুদ্ধের প্রত্যক্ষ উস্কানি না থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে নামা ছাড়া রুশ প্রেসিডেন্টের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *