বাদ্যযন্ত্রে সুর তোলা থেকে বল নিয়ে খেলা সবকিছুতেই পটু সার্কাস হাতি মেরি। তার সব খেলা দেখতে সব বয়সী মানুষ ভিড় জমাত। বলতে গেলে সার্কাসের অন্যতম তারকা ছিল পাঁচ টন ওজনের মেরি। চার বছরের মেরিকে কিনে এনেছিলেন চার্লির বাবা। চার্লি স্পার্কস এবং তার স্ত্রী অ্যাডি মিচেলের কাছে সন্তানের মতো ছিল সে। আকারে অন্য হাতিদের থেকে প্রায় ইঞ্চিতিনেক লম্বা হওয়ায় ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল ‘বিগ মেরি’।
‘স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শোজ’ সার্কাস নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে যে শহরেই যান না কেন চার্লি, মেরির আকর্ষণে লোকজন ছুটে আসত। এভাবেই একবার টেনেসির সালিভান কাউন্টিতে পৌঁছান চার্লিরা।
সেখানেই ঘটেছিল অঘটন। ঘটনার দিন সার্কাসের অন্য হাতিদের সঙ্গে মেরিকে নিয়ে তাদের প্যারেড করাচ্ছিলেন ‘মাহুত’ ওয়াল্টার। মেরির ওপর অঙ্কুশ নিয়ে বসেছিলেন তিনি। হঠাৎই কাছে রাখা তরমুজের টুকরোর দিকে নজর যায় মেরির। শুঁড় দিয়ে তা টেনে খাওয়ার চেষ্টা করতে মেরির কানের পেছনে এল ওয়াল্টারের এক খোঁচা। ডব্লিউ এইচ কোলম্যান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, অঙ্কুশ দিয়ে খোঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে ওয়াল্টারকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে টেনে নামিয়ে আনে মেরি। এর পর শূন্যে প্রায় ১০ ফুট ছুড়ে দেয়। একটি পানীয়র স্ট্যান্ডে ধাক্কা লেগে মাটিতে ছিটকে পড়েন তিনি।
এরপর ওয়াল্টারের শরীরে দুটি দাঁত পুরোপুরি গেঁথে দেয় মেরি। তাতেও থামেনি সে। ওয়াল্টারের মাথায় পা রেখে থেঁতলে দেয়। এরপর লাথি মেরে তাকে ছুড়ে দেয়। এরকম নৃশংসতায় হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন অনেকে। তবে ঘটনার আচমকাই শান্ত হয়ে যায় মেরি। কিন্তু জনতার রোষ কমেনি। মেরির শাস্তির দাবিতে স্লোগান তোলেন তারা: ‘কিল দি এলিফ্যান্ট! লেট’স কিল ইট!’ মেরিকে মারতে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল।
তবে গুলিতে ঝাঁজরা হলেও মেরিকে শেষ করা যায়নি। ব্যবসা বাঁচাতে সন্তানসম মেরিকে জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নেন চার্লি। ১৩ সেপ্টেম্বর ট্রেনে করে আহত মেরিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ইউনিকয় কাউন্টিতে। সেখানে মেরির ফাঁসি দেখতে হাজির হয়েছিল আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।
সেদিন বিকেলে ইউনিকয় কাউন্টির রেললাইনের ওপর ক্রেনে করে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয়েছিল শিকলে বাঁধা মেরিকে। তবে প্রায় পাঁচ ফুট ওঠার পর বিপত্তি। মেরির ওজনের ভারে ক্রেনের শিকল ছিঁড়ে গিয়েছিল। মাটিতে পড়ে মেরির কোমর ভেঙে যায়। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে মেরি। তাতেও জনতার রোষ কমেনি। মেরির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। চলে গণপিটুনি। দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল।
১৯১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মেরিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন পশু চিকিৎসকরা। মেরিকে পরীক্ষার পর পশু চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছে মেরির, তবে আরও একটি কথা জানা গিয়েছিল–তারা মেরির কানের পেছনে ঠিক যেখানে ওয়াল্টার খোঁচা দিয়েছিলেন, সেখানে সংক্রমণের জেরে আগে থেকেই যন্ত্রণায় কাতর ছিল মেরি! মেরিই একমাত্র হাতি, যাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল।