চীনের পিছু যেন ছাড়ছেই না করোনাভাইরাস। করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে চীনের বিভিন্ন স্থানে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে জিরো কোভিড নীতির মতো কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বেইজিং। যে এলাকায় করোনার সামান্য সংক্রমণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে চীনের প্রশাসন। বাকি বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে সেই স্থানকে। কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে জনগণকে বাধ্য করা হচ্ছে ঘরে থাকতে। তারপরও করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে দেশটিতে। নতুন নতুন এলাকায় সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে কঠোর লকডাউনের কারণে প্রভাব পড়ছে চীনের অর্থনীতিতেও। লকডাউন দেওয়ায় কারখানা বন্ধ থাকছে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে। চীনের শিল্পসমৃদ্ধ এমন অনেক অঞ্চলই এখন লকডাউনের আওতায়, যার সঙ্গে সম্পর্কিত বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাপ্লাই চেন কার্যক্রম।
করোনার কারণে এসব কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় সাপ্লাই চেন সঙ্কটের প্রভাব চীন সহ পুরো বিশ্বেই পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে চীনের তথ্যপ্রযুক্তি হাব বলে পরিচিত শেনজেনে লকডাউন দেওয়ায় এর প্রভাব সারা বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি যন্ত্রাংশ তৈরিতেই পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া চীনের অর্থনীতির ওপরেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এই জিরো কোভিড নীতিমালা।
এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে করোনা সংক্রমণ দেখা মাত্রই এভাবে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে আক্রান্ত এলাকায় চীনের এভাবে কঠোর লকডাউন আরোপ করার জিরো কোভিড নীতি আসলে কতটা কার্যকর কতটা যথার্থ।
এক কোটি ত্রিশ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত তথ্যপ্রযুক্তি হাব শেনজেন ছাড়াও পুরো জিলিন প্রদেশে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। এই প্রদেশেই অবস্থিত টয়োটা ও ফোক্সওয়াগনের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা। টয়োটা জিলিন প্রদেশের চ্যাংচুন শহরে তাদের কারখানা বন্ধ করেছে। জার্মানির ফোক্সওয়াগন চ্যাংচুনে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এর ফলে ফোক্সওয়াগন এবং অডি গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরিতে প্রভাব পড়বে। কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে অ্যাপলের আইফোনের সরবরাহকারী ফক্সকনও। সাপ্লাই চেন সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কোম্পানিগুলোতে।
করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় লকডাউনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে চীনের বাণিজ্য নগরী সাংহাইয়ে।
এদিকে সাংহাইয়ে কোভিড লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে এ ব্যাপারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে।
লকডাউনের আশঙ্কায় খাদ্যপণ্যসহ জরুরি কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন সেখানকার অধিবাসীরা। সুপারশপ ও বাজারগুলোতে ভিড় বাড়ছে মানুষের।
চীনে গত কয়েক দিনে নতুন করে আরও ১৫ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে জিলিন প্রদেশে।
উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে বর্তমানে ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে। গত সোমবার থেকে লকডাউন চলছে সেখানে।
এক কোটি ত্রিশ লাখ অধিবাসীর শেনজেন শহরে চলছে ৫ দিনের লকডাউন। নগরীতে সব ধরনের বাস এবং সাবওয়ে সার্ভিসকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানী বেইজিংয়ের সীমান্তবর্তী ল্যাংফ্যাং এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশের ডংগুয়ানে লকডাউন দেওয়া হয়েছে।
জিরো কোভিড নীতি নেওয়া সত্ত্বেও করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না চীন। বিশেষ করে কোভিডের ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের সঙ্গে যেন পেরে উঠছে না চীন। ওমিক্রন নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে চীনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি গত দুই বছরের করোনা অভিজ্ঞতার মধ্য সবচেয়ে ভয়াবহ।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে চীনের জিরো কোভিড নীতি নিয়েও। জিরো কোভিড নীতির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চীনের অর্থনীতিতে গতি আনার কার্যক্রম। একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় সঙ্কটে পড়ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। করোনা লকডাউনের কারণে বন্ধ থাকছে পশ্চিমা বিভিন্ন কোম্পানির কারখানাও। ফলে ব্যাহত হচ্ছে যন্ত্রাংশ তৈরির কার্যক্রম। যার প্রভাব পড়ছে এসব প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উৎপাদন কার্যক্রমে। এতে পুরো বিশ্বের সাপ্লাই চেন কার্যক্রমে নতুন সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলো সহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল যখন ক্রমেই তাদের করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করছে সেখানে জিরো কোভিড নীতির নামে নতুন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করছে চীন। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চীনের অর্থনীতি। অর্থনীতির উত্তরণ নাকি জিরো কোভিড নীতি, কোন পথ বেছে নেবে বেইজিং, এখন দেখার বিষয় সেটাই।