রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা দেওয়ার পর পেরিয়ে গেছে দুই সপ্তাহের বেশি সময়। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার কয়েকদিনের পক্ষেই যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় বসে দু’পক্ষ। দফায় দফায় আলোচনাতেও হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি।
তবে বিশেষজ্ঞরা মতে চলমান আলোচনায় অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই যতক্ষণ না এক পক্ষ মনে করছে যুদ্ধক্ষেত্রে এই আলোচনা গতি সঞ্চার করেছে।
যুদ্ধে প্রাণহানি বন্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৃহস্পতিবার তুরস্কের আন্টালিয়া শহরে শেষবারের মতো আলোচনায় বসে।
যদিও ওই আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই আলোচনার ব্যাপারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কি শনিবার বলেন, সর্বশেষ আলোচনায় রাশিয়ানরা একটি ‘মৌলিকভাবে ভিন্ন পদ্ধতি’ অবলম্বন করেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন আলোচনায় ‘কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন’ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি এখন পর্যন্ত একটি আলটিমেটাম দিয়ে রেখেছে। ইউক্রেন যদি সামরিকীকরণে সম্মত হয়, ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার আঞ্চল গঠনের দাবিকে স্বীকৃতি দেয় তাহলেই কেবল হামলা বন্ধ হবে বলে আলোচনায় শর্ত দিচ্ছে রাশিয়া।
তবে ইউক্রেন রাশিয়ার এই শর্ত প্রত্যাহার করেছে। এক পক্ষের একটি প্রভাবশালী সামরিক অবস্থান তৈরি না করা পর্যন্ত কারোই আপস করার জন্য সামান্য উত্সাহ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) রাশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ওলেগ ইগনাটভ বলেন, এটা এক ধরনের অচলাবস্থা বা স্থবিরতা। কারণ রাশিয়া এখনও আশা করে যে ইউক্রেন তার দাবি মেনে নেবে।
তিনি আরও বলেন, উভয় পক্ষই সামরিক পরিস্থিতিকে প্রধান দৃশ্যপট হিসেবে বিবেচনা করছে: ইউক্রেন এই যুদ্ধে হারছে না এবং রাশিয়া এই যুদ্ধে জিতছে না।
ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (আরইউএসআই) রাশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নাটিয়া সেসকুরিয়া বলেন, যখন দুই পক্ষ মানবিক করিডোর এমনকি অস্থায়ী স্থানীয় যুদ্ধবিরতিতে একমত হওয়ার জন্য লড়াই করছে তখন কূটনৈতিক সমাধান কল্পনা করাও কঠিন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি মনে করি এই মুহুর্তে রাশিয়া ইউক্রেনে সর্বাধিক লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে এবং যদি তারা কূটনৈতিক টেবিলে ইউক্রেনীয়দের এই শর্তগুলো মেনে নিতে বাধ্য করতে সক্ষম হয়, তবে অবশ্যই রাশিয়া যা চাইবে তা পাবে। কিন্তু যদি তারা তা করতে না পারে, তাহলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
প্রবীণ ফরাসি রাষ্ট্রদূত ও প্যারিস-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক মন্টেইগনে ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ মিশেল ডুক্লোসও এ ব্যাপারে একমত হয়ে বলেন, সেখানে যা ঘটছে তাতে মনে হচ্ছে কূটনীতিকি সমাধান গৌণ বিষয়।
চলমান সংঘাতে এরই মধ্যে রুশ সেনারা এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার দাবি করেন, চলমান সংঘাতে ১২শর বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। যদির যুক্তরাষ্ট্রের অনুমানের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুণ।
এই ক্ষয়ক্ষতির পরও রুশ বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের চারপাশ থেকে অগ্রসর হচ্ছে।
ডুকলোস বলেন, মস্কোর কূটনীতির একটি ধারণা রয়েছে। তা হলো অন্য পক্ষকে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য করা। এটা এক ধরনের আল্টিমেটামের কূটনীতি। আমরা এমন এক পর্যায়ে রয়েছি যেখানে রাশিয়ানরা নরম-গরম সব রকম পদক্ষেপই গ্রহণ করছে। কিন্তু আল্টিমেটাম দেওয়ার এই পদ্ধতিও প্রয়োগ করছে মস্কো।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে তুরস্কে আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল ‘বহির্বিশ্ব এবং ইউক্রেনীয়, দুপক্ষের জন্য কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা’।
ডুকলোস আরও বলেন, ইউক্রেনীয়দের জানতে হবে রাশিয়ানরা ঠিক কোথায় অবস্থান করছেন।