গরমের সময় খাবারে আনুন নিয়ন্ত্রণ

লাইফস্টাইল স্পেশাল

মার্চ ৬, ২০২২ ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ

শীত শেষে শুরু হচ্ছে গ্রীষ্ম। শুরু হচ্ছে গরমকাল। আর গরমকালে নানারকম রোগ বাসা বাঁধে আমাদের শরীরে। যার বেশিরভাগ পানি স্বল্পতা। কারণ গরমকালে আমাদের শরীর প্রচণ্ড ঘামায়। এতে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। পানির সঙ্গে বের হয় সোডিয়াম জাতীয় লবণ। যাতে ডিহাইড্রেশনসহ ডায়রিয়া, কলেরা ও আরও নানা রোগ হয়ে থাকে।

এ পরিস্থিতিতে সবার আগে দরকার শরীরকে সুস্থ রাখা। এজন্য প্রতিদিনের খাবারের বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। এমন কিছু খাবার খেতে হবে যা শরীরকে সুস্থ রাখে। এছাড়া শরীর হাইড্রেট রাখতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লিটার পানি খাওয়া উচিত।

খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কিছু খাবার গ্রীষ্মকালে এড়িয়ে চলা ভালো। তাহলে হয়ত অসহ্যকর গরম কিছুটা হলেও সহনীয় থাকতে পারে।

যেসব খাবার খাবেন না-

তৈলাক্ত খাবার ও জাঙ্ক ফুড: পকেটে পয়সা থাকলে পুরি, শিঙাড়ায় মন ভরে না। চাই বার্গার, পিৎজা ইত্যাদি বিভিন্ন জাঙ্ক ফুডে হজমের সমস্যা দেখা দেয়, বাড়ায় খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঝুঁকিও।

প্রসেস্‌ড ফুড: খুব বেশি পরিমাণে প্রসেস্‌ড ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। মাঝে মাঝে খেতে পারেন। তবে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, যা পেট ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।

আমিষ জাতীয় খাবার: মাংস, ডিম, চিংড়ি, স্কুইড, কাঁকড়া ইত্যাদি শরীরে তাপ উৎপন্ন করে। যা শরীরের তাপামাত্রা বাড়াতে এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। তাই গরমের দিনগুলোতে এগুলো না খাওয়াই ভালো। পাশাপাশি ডায়রিয়ার বা পাকস্থলিতে অস্বস্তির কারণও হতে পারে খাবারগুলো।

মসলাদার খাবার পরিহার করুন: ঝাল, মসলাদার, চটপটে খাবার গরমে খাওয়া যাবে না। মরিচ, আদা, গোলমরিচ, জিরা, দারুচিনি ইত্যাদি বিপাকক্রিয়ার গতি বাড়ায়। ফলে স্বাভাবিকভাবে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এমন খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।

চা-কফি: কাজের প্রয়োজনে কিংবা আড্ডায় বসলে চা-কফির হিসেব থাকে না অনেকেরই। দুটোই শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়, তাই গরমে সুস্থ থাকতে চা-কফি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

শুকনা ফল বা খাবার: এই গরমে শুকনো জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভাল। এতে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাতে পারে। শাকসবজি ভাজি করে না খেয়ে রান্না করে খেতে হবে। তাতে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ হবে। এবং শুকনা ফলে প্রচুর পুষ্টিগুণের পাশাপাশি প্রচুর তাপও থাকে। তাই এগুলোও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

চিজ দেওয়া সস: সকল প্রকার চিজ বা পনির সমৃদ্ধ সস থেকে দূরে থাকতে হবে গরমের দিনগুলোতে। কারণ এগুলোতে থাকে প্রায় ৩৬০ ক্যালরি। আর খাওয়ার পর শরীর ছেড়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি হয়। সসের পরিবর্তে সতেজ ফল ও সবজি কিংবা সালাদ বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে টমেটো আদর্শ বিকল্প।

অ্যালকোহল: গরমে অ্যালকোহল শরীরকে আরো গরম করে দেয়। ক্যাফেইনের চাইতেও বেশি মাত্রায় শরীরকে শুষ্ক করে দেয়। এর চেয়ে মজাদার ঠাণ্ডা পানীয় বা শরবত পান করে উৎসব উদযাপন করুন।

আইসক্রিম: গরমে আইসক্রিম খাবেন না শুনে আক্কেল গুড়ুম! তবে জেনে রাখুন ঠাণ্ডা আইসক্রিম সাময়িক প্রশান্তি দেয় ঠিকই। তবে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। এছাড়াও বেশিরভাগ আইসক্রিমেই থাকে প্রায় ৫০০ ক্যালরি। আর এর স্বর্গীয় স্বাদের প্রায় ৬০ শতাংশই আসে ‘স্যাচারেইটেড ফ্যাট’ থেকে। তাই আইসক্রিম খাওয়া কমাতে হবে।

স্যালাইন অনেকেরই ধারণা এই গরমে যেহেতু শরীর ঘামে তাই স্যালাইন পানি খেলে লবণ চাহিদা পূরণ হবে। কিন্তু এটা একটি ভুল ধারণা। গরমে ঘেমে আমাদের শরীর থেকে সোডিয়াম জাতীয় লবণ বের হয়ে যায়। কিন্তু স্যালাইনে থেকে পটাশিয়াম জাতীয় লবণ। তাই ডাইরিয়া বা বমি হওয়া ছাড়া স্যালাইন খাওয়া যাবে না।

কোমল ঠাণ্ডা পানীয়: গরমে অনেকেই কোমল পানীয় পান করে থাকেন। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে হলে ডাবের পানি, তাজা ফলের শরবত, লেবুর রস খেতে পারেন।

রাস্তার পাশের শরবত : গরমে অনেকেই তৃষ্ণা মেটাতে রাস্তার পাশে আখের রস, লেবু পানি, পেপে ইত্যাদির শরবত খান। কোন অবস্থায়ই এসব খাবার খাওয়া যাবে না। এতে জন্ডিস টাইফয়েডের মত মারাত্মক পানিবাহিত রোগ হতে পারে।

যেসব খাবার খাবেন-

আম: ফলের রাজা আম। গ্রীষ্মের সেরা ফল, যা পুষ্টিতেও পূর্ণ। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি রয়েছে, তবে যদি আপনি আপনার ক্যালোরি নিয়ে সচেতন হন, তবে এই ফলটি অল্প পরিমাণে খান। এতে ভিটামিন এ এবং সি, সোডিয়াম, ফাইবার-সহ ২০টিরও বেশি খনিজ রয়েছে যা আপনাকে তাপ থেকে রক্ষা করবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, স্থূলত্ব, হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে আম। আপনি হয়ত জানেন না, ৮৮ শতাংশ ফল জল থেকে তৈরি এবং গ্রীষ্মে এগুলি খেলে শরীরের জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

তরমুজ: গ্রীষ্মে শীত এবং মিষ্টি তরমুজ খাওয়ার চেয়ে ভালো আর কিছু নেই। এটি এই গরম মরসুমে শরীরে জলের অভাব পূরণ করে তরমুজ। ৯২ শতাংশ জল হওয়ায় এই ফলটি হাইড্রেটিংয়ের অন্যতম সেরা উপাদান। শুধু এটিই নয়, এটি ফাইবার, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লাইকোপিনে পূর্ণ, যা ক্যানসার বা স্ট্রোকে খাওয়ার ফলে প্রচুর উপকার পাবেন। বিশেষ করে গ্রীষ্মে এক প্লেট তরমুজ খান, তবে এটি খাওয়ার পরে জল খাবেন না ।

শসা: গ্রীষ্মের মরসুমে শশা সেরা ফল হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি এমন একটি ফল, যা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দূর করে। এটি ভিটামিন K, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ এবং এতে ৯৫ শতাংশ জল রয়েছে। সর্বোত্তম জিনিসটি এটিতে খুব কম ক্যালোরি রয়েছে। শসা শরীরের জন্য ডিটক্সাইফায়ার। এটি আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর করে তোলার একটি ঘরোয়া প্রতিকার।

টমেটো: টমেটো একটি চিরসবুজ ফল, যা প্রতিটি মরসুমে সহজেই পাওয়া যায়। সবাই সাধারণত শাক-সবজি হিসাবে টমেটো ব্যবহার করে তবে গ্রীষ্মের দিনগুলিতে এটি কাঁচা খেলে ভিটামিন-A, বি -2, সি, ফোলেট, ক্রোমিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ফাইটোকেমিক্যাল জাতীয় পুষ্টির একত্রিত করে। এর সালাদ খাওয়া যায়। এটি ক্যানসার, অটোইমিউন ডিসঅর্ডার এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা হ্রাস করে। টমেটোতে ৯৫ শতাংশ জল রয়েছে।

লেবু: গ্রীষ্মে, আপনি সর্বত্র লেবু দেখতে পাবেন। এই ফলের প্রভাব ঠান্ডা। এই ফলটি অবশ্যই কিছুটা টকযুক্ত তবে তাপ এড়াতে আপনি এটি প্রতিদিন গ্রহণ করতে পারেন। এতে পাওয়া পটাসিয়াম গ্রীষ্মে আপনাকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করবে। গ্রীষ্মে ঘামের সময় শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি থাকে যা মাংসপেশীর বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ৮৮ শতাংশ জলযুক্ত, এই ফলগুলিতে ভিটামিন সি, এআই, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *