নভেম্বর ২২, ২০২৪ ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যে সম্মান জানানো হয়েছে তাতে গোটা জাতি আনন্দিত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানিয়ে আরও বলেন, খালেদা জিয়া এ দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য তার জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা দিয়ে দিয়েছেন। তাকে ১২ বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে সবচেয়ে দেশপ্রেমিক বাহিনী সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীকে তার থেকে দূরে করে রাখা হয়েছে। আমি এই দিনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
বিশেষ করে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে, তিনি ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) যে সম্মান দেখিয়েছেন, এতে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ হয়েছি, একই সঙ্গে গোটা জাতি আনন্দিত হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। এদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে নিজের সাদা গাড়িতে চড়ে সেনাবাহিনীর প্রটোকল পাহারায় সেনানিবাসের উদ্দেশে রওয়ানা হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার গাড়ির সামনে ছিল মিলিটারি পুলিশের (এমপি) পাইলট কার, পেছনে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ছিলেন তার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন। খালেদা জিয়া বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় রাস্তায় জড়ো হওয়া বিএনপি কর্মীরা পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন। বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছান খালেদা জিয়া। এ সময় হুইলচেয়ারে করে তাকে অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আসনে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান তাকে অভ্যর্থনা জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি জানান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছে তার আসনে বসার পর অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়াকে অনুষ্ঠানে দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও ছিলেন।
শায়রুল কবির আরও জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও। ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। বিএনপি চেয়ারপারসন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্রদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার দিয়ে লেখেন, ‘সোনালি অতীত, গর্বিত ভবিষ্যৎ।’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে সারজিস আলম লেখেন, ‘আপনার আপসহীন মনোভাব আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’
সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারসহ যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দল এবং জোটের শীর্ষ নেতা ও বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির ২৬ নেতাকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএসএম কামরুল আহসান বুধবার রাতে গুলশানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাসা ফিরোজায় গিয়ে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন।
সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তখন তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। এরপর আর কখনো তাকে সেনাকুঞ্জের এ আয়োজনে দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে কারাগারে যাওয়ার পর তাকে আর আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।