কিডনি রোগীর ডায়েটে যা মনে রাখা প্রয়োজন

স্বাস্থ্য

মার্চ ১১, ২০২২ ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেক কিডনি রোগীই মনে করেন, এ অসুখ হলে প্রোটিন খাওয়া যাবে না একেবারেই। প্রোটিন খাওয়া ছেড়ে দেওয়ায় এসব রোগীকে আরও নানান জটিলতার সম্মুখীন হতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিডনির সমস্যা মানেই কিন্তু প্রোটিন বন্ধ করে দেওয়া নয়। প্রোটিন শরীরে নেওয়া বন্ধ করে দিলে দেহে নাইট্রোজেন সমতা কমে যায়। সে ক্ষেত্রে রোগীর কোষ ক্ষয় শুরু হয়। শুধু তাই নয়, সারকোপিনিয়া এবং শরীরে ভাঙনমূলক ক্রিয়াকলাপও শুরু হতে পারে। এর ফলে ভীষণ শীর্ণকায় হতে শুরু করবেন রোগী। ধীরে ধীরে হিমোগ্লোবিন কমতে শুরু করে দেহে রক্তাল্পতা বা এনিমিয়া দেখা দেবে।

এসব জটিলতা এড়াতে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে রোগীদের সঠিক ডায়েট তৈরির ওপর জোর দেন গবেষকরা। এ বিষয়ে কলকাতার পুষ্টিবিদ ও কিডনি ডায়েট বিশেষজ্ঞ অরিত্র খাঁ জানান, সঠিক ডায়েট তৈরির জন্য রোগীদের ক্ষেত্রে প্রথমেই রক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। যেমন: ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, এস্টিমেটেড গ্লোমেরুলার রেট, ব্লাড ইউরিয়া নিউট্রোজেন, ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়। সব রকম ইলেকট্রোলাইট, ফসফরাসও দেখে নেওয়া হয়। এই দিকগুলো দেখে নিয়ে একজন কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর ডায়েট তৈরি করা হয়।

সাধারণত ক্রনিক কিডনি ডিজিজ স্টেজ ওয়ান থেকে স্টেজ ফোর পর্যন্ত থাকে। এখন রোগী কোন স্টেজে রয়েছে, তা দেখে নিয়ে একজন ডায়েটেশিয়ান রোগীর ডায়েটে ক্যালরি নির্ধারণ করে। সাধারণত লো প্রোটিন ওয়ান (৪০-৪৫ গ্রাম) এবং লো প্রোটিন টু (২০-২৫ গ্রাম) দেওয়া হয়। সারা দিনে এর থেকে বেশি প্রোটিন রোগী কোনোভাবেই খেতে পারবে না। যদি তা না মানা হয়, তবে রোগীর হাইপোক্যালেমিয়া (পটাসিয়াম কমে যাওয়া), হাইপোনেট্রিমিয়া (সোডিয়াম কমে যাওয়া) সমস্যা শুরু হবে।

কিডনি রোগীর ডায়েটে প্রোটিন অগ্রাধিকার পেলেও ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন বাদ রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে পরিপূরক হিসেবে ডিমের সাদা অংশ, সপ্তাহে ১-২ দিন ডিমের কুসুম, ৪০-৫০ গ্রামের মতো মাছ রাখা যেতে পারে। তবে বড় মাছ নয়। চিকেনও খাওয়া যেতে পারে। অনেকের ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি থাকে। সেখানে উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাওয়া বাদ রাখা হয়। উদ্ভিজ প্রোটিন খেতে কোনো বাধা নেই কিডনি রোগীদের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের কিডনির সমস্যা থাকে, তাদের রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ অবস্থাকে বলা হয় হাইপারক্যালামিয়া। এ ক্ষেত্রে রোগীর প্রোটিনিউরিয়া অর্থাৎ দেহ থেকে মূত্রের মাধ্যমে প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেবে।

কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিহত করতে উচ্চ পটাসিয়াম (ধনেপাতা, সজনেডাঁটা, পালংশাক, আলু, কাঁচা পেঁপে ইত্যাদি) ও ফসফরাস (পেয়ারা, দুধ, গুড় ইত্যাদি) রয়েছে এমন খাওয়ার ডায়েট থেকে বাদ রাখা হয়। সেই সঙ্গে খাবারে তেল, মসলা, অতিরিক্ত লবণ ও ফাস্টফুড খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে কিডনি রোগীদের।

সূত্র: এবিপি লাইভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *