ওয়ার্নকে নাইটহুড দিতে ব্রিটিশ সংবিধান সংশোধনের দাবি!

খেলা স্লাইড

মার্চ ১৫, ২০২২ ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

উইজডেনের বাছাইয়ে ঊনিশ শতাব্দীর সেরা পাঁচ ক্রিকেটার হলেন – স্যার ডন ব্রাডম্যান, স্যার জ্যাক হবস, স্যার গারফিল্ড সোবার্স, স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ও শেন ওয়ার্ন। লক্ষ্য করে দেখুন তো লিস্টে কোন ব্যতিক্রম চোখে পড়ে কীনা? – ঠিক ধরেছেন, শেন ওয়ার্নের নামের সামনে ‘স্যার’ উপাধি নেই। বাকি চারজন যেখানে ব্রিটিশরাজের নাইটহুড খেতাবধারী, সেখানে ওয়ার্নই একমাত্র ব্যতিক্রম। সদ্য প্রয়াত লেগ স্পিন কিংবদন্তীকে নাইট খেতাবে ভূষিত করার জন্য কয়েক বছর ধরে ব্রিটেনে প্রচারণা চলছে। প্রিয় শত্রু ‘ওয়ার্নি’র আকস্মিক মৃত্যুর পর সেই প্রচারণায় আওয়াজ বেড়েছে আরও। এমনকি সংবিধান পরিবর্তন করে হলেও ওয়ার্নকে নাইটহুড দিতে হবে- এমন পিটিশন স্বাক্ষর শুরু হয়েছে ব্রিটেনে।

নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্রিটিশরাজের পক্ষ থেকে নাইটহুড খেতাব দেয়ার চল রয়েছে। ক্রীড়াক্ষেত্রেও অনেকেই পেয়েছেন নাইট খেতাব। ক্রিকেটারদের মধ্যে নামের আগে সবচেয়ে বেশি ‘স্যার’ যোগ হয়েছে ইংলিশদের। মোট ১৪ জন ইংলিশ ক্রিকেটার পেয়েছেন নাইটহুড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ জন ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তবে আশ্চর্যের বিষয় অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে শুধু ব্রাডম্যানের নামের সামনে ‘স্যার’ বিশেষণটি উচ্চারিত হয়। দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ার্নকে এই খেতাব দেওয়ার জোর দাবি ছিল খোদ ব্রিটিশদের মধ্যেই। কিন্তু ওয়ার্নের মৃত্যুতে সেই সম্ভাবনায় পড়েছে ছেদ।

মৃত ব্যক্তিদের দেওয়া হয় না নাইটহুড। নাইটহুড প্রাপ্তদের কাঁধে রাজকীয় তরবারি ছুঁইয়ে ব্রিটিশ মহারানী আনুষ্ঠানিকভাবে নাইট খেতাব দিয়ে থাকেন। মৃতদের কাঁধে তো আর তরবারি ছোঁয়ানোর সুযোগ নেই, তাই তাদের সৌভাগ্য় হয় না ‘স্যার’ হওয়া।

মৃত ওয়ার্নের যেন সেই সৌভাগ্য হয় তার জন্য ব্রিটেনে চলছে জোর প্রচারণা। ওয়ার্ন বেঁচে থাকতে তিন বছর আগেই পিটিশনের মাধ্যমে এই দাবি তোলা হয়। ৪ মার্চ ৫২ বছর বয়সী ওয়ার্নের মৃত্যুর পর অনলাইনে ‘লেটস ইউনাইট অ্যান্ড মেক ওয়ার্নি আ নাইট’ প্রচারণা শুরু করেন বেন মালৌফ ও তাঁর শ্যালক ম্যাথু—জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম।

পিটিশনে বলা হয়েছে, ওয়ার্নকে নাইটহুড না দেওয়ার পেছনে কোনো যুক্তিই নেই। ‘ওয়ার্ন যে এই সম্মানের দাবিদার, তার অর্জনগুলোই সে কথা বলে। টেস্টে ৭০৮ উইকেট, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩১৯ উইকেট, ওয়ানডেতেও শত উইকেটের বেশি, অ্যাশেজ ও বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতেই হারানো, ৯৯ রানে আউট হওয়া, ম্যাজিক্যাল ফ্লিপার, বারান্দায় শ্যাম্পেন ছিটানো, দৈনন্দিন জীবনের বৈচিত্রময়তা! এই মানুষটা একজন কিংবদন্তি। এতো শুধু ক্রিকেট জীবন। এর বাইরেও তিনি মানবপ্রেমী, সংবাদকর্মী, খুব কম সময়েই হয়ে ওঠা সময়ের সেরা ধারাভাষ্যকারদের একজন, একজন বিনোদনদাতা ও অস্ট্রেলিয়ান হিরো।’

এদিকে জীবিত অবস্থায় ওয়ার্নকে কোন জাতীয় সম্মাননা না দিলেও, মৃত্যুর পর তাকে সম্মানিত করতে উদ্যগী হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান সরকার। রাষ্ট্রীয় ভাবে তার শেষযাত্রার আয়োজন করবে অস্ট্রেলিয়া সরকার। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা সম্মানসূচক উপাধি তাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রানী এলিজাবেথের জন্মদিনে ওয়ার্নকে ‘অফিসার’ কিংবা ‘মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া’- এই দুটির যেকোন একটি উপাধিতে ভূষিত করবে অস্ট্রেলিয়ান সরকার।

এদিকে, ব্রিটেনের নাইটহুডের জন্য ওয়ার্নের পক্ষে প্রচারণা শুরুর পর গত চার দিনে পিটিশনে সই করেছেন ৪২৭৩ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *