মার্চ ২১, ২০২২ ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ
টস-ভাগ্য সহায় হলেও প্রথম ওয়ানডের মতো জ্বলে উঠতে পারলেন না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। জোহানেসবার্গের উইকেটে শুরুতে কাল দারুণ বাউন্স পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। সুবিধা কাজে লাগিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন কাগিসো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিডি।
আগের ম্যাচে তিনশ ছাড়ানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩৪ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে। চরম বিপদের মুহূর্তে যোদ্ধা হিসাবে নিজেকে চেনান আফিফ হোসেন। তার লড়াকু হাফ সেঞ্চুরি (৭২) ও মেহেদী হাসান মিরাজের (৩৮) প্রতিরোধে বাংলাদেশ করতে পারে নয় উইকেটে ১৯৪ রান। সপ্তম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে আফিফ ও মিরাজ ৮৬ রান যোগ করেন।
গত মাসে দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে প্রায় হারা ম্যাচ জিতিয়েছিলেন আফিফ ও মিরাজ। সপ্তম উইকেটে তাদের দুইশ ছাড়ানো রেকর্ড জুটিতে প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস গড়ে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। রোববার জোহানেসবার্গেও একপর্যায়ে একশ হওয়া নিয়েই জেগেছিল শঙ্কা। ৩৪ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজের সঙ্গে দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটিতে দলকে মোটামুটি লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন আফিফ। বাংলাদেশ যখন অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়, মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ গড়েন প্রতিরোধ। বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন দুজন। ষষ্ঠ উইকেটে এই জুটি থেকে আসে ৬০ রান। ৪৪ বলে তিন চারে মাহমুদউল্লাহ ২৫ করে আউট হন।
মাহমুদউল্লাহকে হারানোর পর আফিফ লড়াই চালিয়ে যান মিরাজকে নিয়ে। দারুণ কার্যকর আরেকটি জুটি গড়ে তোলেন তারা। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এই তরুণ ব্যাটার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে ফিফটি পূর্ণ করেন ৭৯ বলে। আফিফ ও মিরাজ আগের ওভারে একবার করে জীবন পান।
লং অনে মিরাজের ক্যাচ ফেলেন ইয়েনেমান মালান। আফিফের ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি বোলার। আফিফ বেঁচে যান ৫৯ রানে, ২১ রানে মিরাজ। দুজনের ব্যাটে একপর্যায়ে বড় সংগ্রহের আশা জেগেছিল। কিন্তু প্রথম স্পেলে আগুন ঝরানো রাবাদার শেষ ওভারে দুজনই কাটা পড়েন। তার কাটার বুঝতে পারেননি আফিফ ও মিরাজ। পুল করার চেষ্টায় ঠিকমতো খেলতে পারেননি আফিফ। বল উঠে যায় আকাশে। স্লোয়ারে আগেই ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দেন মিরাজ। ইনিংসসেরা ৮৬ রানের জুটি ভাঙে আফিফের বিদায়ে। মিরাজের বিদায়ের পর শেষ পাঁচ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলতে পারে মাত্র ১৪ রান।
তার আগে শুরুতে আগের ম্যাচের নায়ক সাকিব ফেরেন শূন্যতে। তামিম এক রানে। লিটন করেন ১৫ রান। অনেক ম্যাচের ত্রাতা মুশফিকুর রহিম থিতু হয়েও এগোতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে দারুণ ফিফটি করে আলোয় আসা ইয়াসির কাল জীবন পেয়েও ফেরেন মাত্র দুই রান করে। সেখান থেকে আফিফ ও মিরাজের জুটি বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রেখেছিল। কিন্তু এবার তারা জয়ের নায়ক হতে পারেননি। সাত উইকেটের অনায়াস জয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ
রান বল ৪ ৬
তামিম ক মহারাজ ব এনগিডি ১ ৪ ০ ০
লিটন ক ডি কক ব রাবাদা ১৫ ২১ ৩ ০
সাকিব ক ভারিনে ব রাবাদা ০ ৬ ০ ০
মুশফিকুর এলবিডব্লু ব পারনেল ১১ ৩১ ০ ০
ইয়াসির ক মহারাজ ব রাবাদা ২ ১৪ ০ ০
মাহমুদউল্লাহ ক মালান ব শামসি ২৫ ৪৪ ৩ ০
আফিফ ক বাভুমা ব রাবাদা ৭২ ১০৭ ৯ ০
মিরাজ ক মালান ব রাবাদা ৩৮ ৪৯ ১ ২
তাসকিন নটআউট ৯ ১২ ০ ০
শরিফুল ক সাব ব ডুসেন ২ ৮ ০ ০
মোস্তাফিজ নটআউট ২ ৬ ০ ০
অতিরিক্ত ১৭
মোট (৯ উইকেটে, ৫০ ওভারে) ১৯৪
উইকেট পতন : ১/৭, ২/৮, ৩/২৩, ৪/৩৪, ৫/৩৪, ৬/৯৪, ৭/১৮০, ৮/১৮১, ৯/১৮৮।
বোলিং : লুঙ্গি এনগিডি ১০-২-৩৪-১, কাগিসো রাবাদা ১০-০-৩৯-৫, ওয়েন পারনেল ২.৫-০-৬-১, টেম্বা বাভুমা ৬.১-০-২২-০, তাবরাইজ শামসি ১০-১-২৬-১, কেশব মহারাজ ১০-০-৫৭-০, ফন ডার ডুসেন ১-০-৩-১।
দক্ষিণ আফ্রিকা
রান বল ৪ ৬
মালান ব মিরাজ ২৬ ৪০ ৪ ০
ডি কক ক আফিফ ব সাকিব ৬২ ৪১ ৯ ২
ভারিনে নটআউট ৫৮ ৭৭ ৪ ২
বাভুমা ক শরিফুল ব আফিফ ৩৭ ৫২ ৩ ১
ফন ডার ডুসেন নটআউট ৮ ১৪ ১ ০
অতিরিক্ত ৪
মোট (৩ উইকেটে, ৩৭.২ ওভারে) ১৯৫
উইকেট পতন : ১/৮৬, ২/৯৪, ৩/১৭৬।
বোলিং : শরিফুল ইসলাম ৪-০-২৯-০, তাসকিন আহমেদ ৪-০-৪১-০, মেহেদী হাসান মিরাজ ১০-০-৫৬-১, মোস্তাফিজুর রহমান ৩-০-১৩-০, সাকিব আল হাসান ১০-২-৩৩-১, আফিফ ৫-০-১৫-১, মাহমুদউল্লাহ ১.২-০-৮-০।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)।