চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি যেন শেষই হচ্ছে না। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিল নির্বাচন। নানা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এর রেশ এখনও কাটেনি। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির শপথ গ্রহণ করেছেন সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী চিত্রনায়ক জায়েদ খান।
শুক্রবার (০৪ মার্চ) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে এফডিসিতে জায়েদ খানকে শপথ বাক্য পাঠ করান সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় সেখানে অভিনেতা ডিপজল, অরুনা বিশ্বাসসহ জায়েদ খান প্যানেলের আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে। আসার আগেই জায়েদকে বলেছিলাম, যদি আদালতের সিদ্ধান্তের কপি আমাকে দেখাতে পার, তাহলে তোমাকে শপথ পড়াব। যেহেতু আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তাই আইন মেনেই তাকে শপথ পড়াতে এসেছি।’
শপথগ্রহণ শেষে জায়েদ খান সভাপতির অনুমতি নিয়ে বাকি সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এরপর সবাই মিলে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
কিন্তু এখনও থামেনি এ লড়াই। এবার জায়েদ খানকে বয়কট করেছে চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন। আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছে চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিবার। চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের স্বাক্ষর করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনের দিন কিছু অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘আজ থেকে জায়েদ খানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বয়কট করা হলো।’
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সোহানুর রহমান সোহান।
এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে লড়াই এবং আন্দোলনের শেষ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।
এর আগে উচ্চ আদালতের রায়ে জায়েদ খান সাধারণ সম্পাদকের পদ ফিরে পান। ফিরে এফডিসিতে এলেও সমিতির কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ক্ষোভ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আদালতের রায়ে জায়েদ খান তার পদ ফিরে পেয়েছেন। এখন তাকে সম্মানের সঙ্গে সেই পদ ও চেয়ার ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের সবার কর্তব্য। যদি আজ জায়েদকে সমিতিতে না ঢুকতে দেয়, তাহলে সমিতির তালা ভেঙে প্রবেশ করানো হবে। আদালতের রায়ে এই চেয়ার এখন ওর প্রাপ্য।’
উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। নিপুণ আক্তার পান ১৬৩ ভোট। এরপর টাকা দিয়ে ভোট কেনাসহ একাধিক অভিযোগ আনেন নিপুণ। পরে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ডে আবেদন করেন নিপুণ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে করণীয় জানতে আবেদন করেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান।
বৈঠকে শেষে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করেন বোর্ডের প্রধান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। এর পরদিন ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ পরিষদের বিজয়ীরা শপথ নেন।
নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা এবং নিজের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী আপিল বোর্ডের জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করা হয়। এ ছাড়া নিপুণের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে সমাজসেবা অধিদফতরের চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত করা হয়।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নিপুণ। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। সে পর্যন্ত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দুজনের কেউই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না মর্মে (স্ট্যাটাসকো) আদেশ দেওয়া হয়।
এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টকেই তাদের জারি করা রুলটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির আগপর্যন্ত চেম্বার আদালতের দেওয়া আদেশই বহাল থাকবে বলে নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।